বজ্রপাত রোধে গৌতম সাহার অসামান্য ভূমিকা

সম্পাদকীয়

একটি তালবীজ গাছ হয়ে উঠতে সময় লাগে এক দশক বা যুগের বেশি। কথায় আছে, তালবীজ রোপণকারী নিজেই সেই গাছের তালের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে অন্যান্য ফলদ গাছের চারা লাগানোর প্রবণতাই আমরা বেশি দেখি।

তালবীজ রোপণ করাটা ধৈর্য ও দীর্ঘ অপেক্ষার বিষয়। একনিষ্ঠ প্রকৃতিপ্রেমিক হলেই সেটি সম্ভব। তেমনি একজন হলেন নওগাঁর পোরশা উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের গৌতম কুমার সাহা।

বৃক্ষপ্রেমিক মানুষটি তালবীজ রোপণ করাকে রীতিমতো সাধনার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এক যুগ ধরে নিজ উদ্যোগেই রোপণ করেছেন প্রায় ৪০ হাজার তালবীজ। বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যিকার অর্থেই তিনি সেটি করেছেন।

মশিদপুরের গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে সারি সারি ছোট-বড় তালগাছগুলো গৌতম সাহারই সাধনার ফসল। এখনো বিভিন্ন সড়কের পাশে তালবীজ রোপণ করে চলেছেন তিনি। ৬২ বছর বয়সী এই ক্ষুদ্র কৃষক স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন খড়ের ঘরে।

বহু বছর আগে টেলিভিশনে দেখেছিলেন, তালগাছ মানুষকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করে এবং মাটির ক্ষয় রোধ করে। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি নেমে গেলেন তালবীজ সংগ্রহ এবং সেগুলো রোপণ করার কাজে। প্রকৃতি সুরক্ষায় এমন অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তিনি। আগামী মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সেই পুরস্কার গ্রহণ করবেন গৌতম।

তালবীজ রোপণ করে নানা সময়ে খবর হয়েছেন এমন আরও অনেকে। তাঁরা শুধু বৃক্ষপ্রেমিকই নন, মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এ কাজকে ব্রত হিসেবে নিয়েছেন।

বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষার বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে সচেষ্ট থেকেছেন, সেই সঙ্গে অনুপ্রেরণা তৈরি করে গেছেন অন্যদের জন্যও। আন্তর্জাতিক গবেষণা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় দেড় শ মানুষের মৃত্যু হয়। প্রকৃতপক্ষে তা পাঁচ শ থেকে এক হাজার।

সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতের ভয়াবহতা এত বেড়েছে যে একই সঙ্গে অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বজ্রপাতে বেশির ভাগ শিকার হন কৃষকেরাই। এতে ভুক্তভোগী হয় তঁাদের পরিবার।

গৌতম সাহা নিজে একজন কৃষক বলে কীভাবে কৃষকদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারেন? অথচ বজ্রপাত নিরোধে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর, কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনাকাটা ও বসানো—সবকিছুই হয়েছে। লাখ লাখ তালবীজ সংগ্রহ ও রোপণের কথাও বলা হয়েছে। জনগণের অর্থ অপচয় ছাড়া সেসব প্রকল্পের কোনো প্রতিফলনই আমরা দেখিনি।

বজ্রপাত নিরোধে সরকারের ব্যর্থতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমরা গৌতম সাহাদের প্রতি অভিবাদন জানাই।