জরাজীর্ণ ভবন সংস্কার করুন

বাংলাদেশে শিশু-কিশোর-তরুণদের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? থাকলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেন জরাজীর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয় না? দেশজুড়ে প্রকল্প-মেগা প্রকল্পের মহাযজ্ঞের মধ্যেও কী করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে? কিংবা বিম থেকে বেরিয়ে থাকে রড? 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে এমন একটি জরাজীর্ণ সরকারি কলেজের খবর দিচ্ছে। এ কলেজের ছাত্র সাগর মণ্ডলের বাবা শওকত মণ্ডল বলেছেন, ‘ছেলেটা যখন কলেজে যায় চিন্তায় থাকি। কখন না জানি কী বিপদ ঘটে যায়।’ অভিভাবকদের এই আশঙ্কা কি অমূলক?

চরভদ্রাসন সরকারি কলেজ ১৯৯২ সালে তিনতলা হয়। তিনতলার বিজ্ঞান ভবনের অবস্থা নাজুক। আবার দোতলারও দুটি কক্ষ আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে পশ্চিম দিকের শ্রেণিকক্ষের বিমের ঢালাইকৃত বেশ কিছু অংশ ভেঙে রড বের হয়ে গেছে। ফাটলও রয়েছে। পুরো ভবনই উত্তর দিকে হেলে পড়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ নিখিল রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, তাঁরা বারবার ভবনটি সংস্কারের অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি ছাপা হওয়ার পর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি দাবি করেছেন, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত সংস্কার হয়। বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। তাই প্রতি উপজেলায় বছরে তিন–চারটির বেশি ভবন সংস্কার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বাজেট সংকট। প্রশ্ন হলো, নিয়মিত যদি ভবনগুলোর সংস্কার করাই হয়, তাহলে চরভদ্রাসনের সরকারি এই কলেজের এমন ভগ্ন দশা কেন? তবে চরভদ্রাসনের এই একটি কলেজেরই এই হাল, তা কিন্তু নয়। বছর কয়েক আগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সংসদে বলেছিলেন, দেশে জরাজীর্ণ ও সংস্কারযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০ হাজার ৯৬০। 

বিদ্যালয়ের ছাদ ভাঙার ঘটনা নতুন নয়। দু–এক বছর আগেও মাগুরার শালিখায় আদাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ছাদ ধসে পড়েছিল। ছাদ ধসার সময় কোনো ছাত্রছাত্রী ছিল না, তাই প্রাণহানি ঘটেনি। তবে বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী পি কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবনের ছাদের বিম ধসে পড়ে আমরা এক শিক্ষার্থীকে মারা যেতে দেখেছি।

বিদ্যালয়ের ছাদ ভাঙার ঘটনা নতুন নয়। দু–এক বছর আগেও মাগুরার শালিখায় আদাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ছাদ ধসে পড়েছিল। ছাদ ধসার সময় কোনো ছাত্রছাত্রী ছিল না, তাই প্রাণহানি ঘটেনি। তবে বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী পি কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবনের ছাদের বিম ধসে পড়ে আমরা এক শিক্ষার্থীকে মারা যেতে দেখেছি।

বোঝাই যাচ্ছে, বড় বড় প্রকল্পের আড়ালে স্কুল-কলেজের অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না নীতিনির্ধারকদের কাছে। বিদ্যালয়গুলো পরিচালনার জন্য বিদ্যোৎসাহী লোকজন তো থাকেন কমিটিতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বেলায় স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের দৌড়ঝাঁপও দেখি বিস্তর। তাঁরাও কেন একটু উদ্যোগী হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে মনোযোগী হন না? থুতনিতে হাত রেখে চুল আঁচড়িয়ে যে মা সন্তানকে স্কুল-কলেজে পাঠান, কেন তাঁকে শঙ্কায় থাকতে হয়? এই পরিস্থিতি খুব লজ্জার।