‘ভারপ্রাপ্ত’ মুক্ত হোক সিটি করপোরেশন

সম্পাদকীয়

২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘মেয়র’ সংকট পিছু ছাড়ছে না। গত ১০ বছরের প্রায় ৩ বছর চলেছে মেয়র ছাড়াই। ২০১৩ সালে প্রথম নির্বাচিত মেয়র বিএনপির আবদুল মান্নান মামলা-হয়রানির কারণে ২৩ মাস ছিলেন দায়িত্বের বাইরে। ঠুনকো মামলায় তাঁকে জেলও খাটতে হয়েছে।

২০১৮ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালে গত বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যসংবলিত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় গত বছর ১৯ নভেম্বর তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ২৫ নভেম্বর মেয়র পদ থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাঁর বিরুদ্ধে সম্পদের অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারের মামলাও আছে। সেই থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান ওরফে কিরণ ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী বছরের জুলাই মাসে সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে।

উল্লেখ্য, ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজীপুরে ৩০ লাখ মানুষের বাস। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন গঠনের প্রায় ১০ বছর পার হলেও নাগরিক সুবিধা বাড়েনি। গাজীপুরের প্রধান সমস্যা খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট, জলাবদ্ধতা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ। অল্প বৃষ্টিতে নগরীর জয়দেবপুর থেকে পুবাইল, কোনাবাড়ী-কাশিমপুর, টঙ্গী আরিচপুর, বউবাজারসহ বিভিন্ন সড়ক ডুবে যায়। যেসব নতুন এলাকা সিটি করপোরেশনে যুক্ত হয়েছে, সেখানে নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে।

সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সড়ক প্রশস্তকরণসহ যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, সেগুলোর বেশির ভাগের কাজ থেমে আছে নানা জটিলতায়। তিনি সড়ক প্রশস্তকরণের নামে অনেকের বাড়িঘর উচ্ছেদ করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। বরখাস্ত হওয়ার ৯ মাস পর জাহাঙ্গীর আলম গত ১৪ আগস্ট মেয়র পদ ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে রিট করেন।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি রুলনিশি জারি করেছেন। অন্যদিকে দুর্নীতির দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, তার তদন্তও শেষ হয়নি। তদন্ত না হওয়ায় মামলার বিচারপ্রক্রিয়াও শুরু হতে পারছে না।

এ অবস্থায় গাজীপুরবাসী নগরের সমস্যা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরই গাজীপুরের অবস্থান। দেশের চতুর্থ বৃহত্তর এ সিটি করপোরেশন আর কত দিন অভিভাবকহীন থাকবে?

আইনি প্রক্রিয়া প্রলম্বিত করে সরকার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। আইনি দুর্বলতার কারণেই সিটি করপোরেশনে অনির্দিষ্টকাল মেয়র পদ শূন্য আছে।

গাজীপুরবাসী কেন নির্বাচিত প্রতিনিধি থেকে বঞ্চিত হবে? যদি জাহাঙ্গীর আলম আইনের চোখে অপরাধী হন, তাহলে এই পদ থেকে স্থায়ী বরখাস্ত করে নতুন মেয়র নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জেলা পরিষদের সর্বশেষ আইনে পদ শূন্য হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের বিধান রাখা আছে। সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার সংস্থার ক্ষেত্রেও একই বিধান থাকা বাঞ্ছনীয়।

৩০ লাখ মানুষের শিল্পনগরী গাজীপুর অভিভাবকহীন থাকতে পারে না। ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিয়েও এটি মাসের পর মাস চলতে পারে না।

অবিলম্বে আইনি জটিলতা দূর করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে ‘ভারমুক্ত’ করা হোক।