অভিযুক্তদের কোনোভাবেই ছাড় নয়

সম্পাদকীয়

দেশে অভাব–অনটনের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা নতুন নয়। তবে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় যা ঘটে গেল, তা খুবই ভয়াবহ। সেখানকার একটি ইউনিয়নে অভাবের কারণে টাকা ধার নিয়ে ফেরত দিতে না পেরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ। শুধু তা–ই নয়, টানা দুই মাস ধরে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী স্বামীসহ বিষপান করেন। তবে স্বামী বেঁচে গেলেও মারা যান ওই নারী। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এক পুলিশ কর্মকর্তা সহায়তা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি আরও গুরুতর।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত ২৪ মে স্বামীসহ বিষপান করেন ওই গৃহবধূ। কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরলেও চিকিৎসার খরচের অভাবে পাঁচ দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। কয়েক মাস আগে অভাবের কারণে তাঁর স্বামী স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে ২০ হাজার টাকা ধার নেন।

যথাসময়ে ওই টাকা শোধ করতে না পারায় ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করা শুরু করেন ওই ব্যক্তি। এরপর সহযোগী দিয়ে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করেন তিনি। সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আরও কয়েকজন মিলে দিনের পর দিন ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। মৃত্যুর আগে একটি অডিওতে গোটা বিষয়টি বলে যান ভুক্তভোগী নারী। সেখানেই তিনি উল্লেখ করেন তাঁকে ধর্ষণকারীরা হলেন জয়নাল, শুক্কুর ও সোলেমান।

ধর্ষণের এ ঘটনার সময় ওই নারীর স্বামী দিনমজুরির কাজে টাঙ্গাইল ছিলেন। কয়েক মাস পর বাড়িতে এলে স্ত্রীকে ধর্ষণের বিষয়টি জানতে পেরে এর বিচার চান স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে। কিন্তু তাঁদের কাছে তাঁরা বিচার পাননি। এমনকি রাজীবপুর থানায় মামলা করতে গিয়েও ব্যর্থ হন। থানায় যাওয়ার আগেই অভিযুক্ত জয়নালসহ পুলিশ কনস্টেবল রবিউল ইসলাম পথ রোধ করে ভুক্তভোগীদের ফিরিয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে টাকা দিয়ে ঘটনার মীমাংসা করতে চান। কিন্তু ওই দম্পতি টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং বিচার চাওয়ার প্রতি অটল থাকেন। বিচারের আশ্বাস না পাওয়ায় হতাশ হয়ে একপর্যায়ে বিষপান করেন স্বামী–স্ত্রী। তাঁদের তিন বছর বয়সী একটি শিশু রয়েছে।

ভুক্তভোগী নারীর মৃত্যুর পর অভিযুক্ত ধর্ষণকারীরা পালিয়েছেন। তাঁরা সবাই পেশায় কসাই। তাঁদের বাঁচাতে সহায়তা করেন কনস্টেবল রবিউল ইসলাম, পুলিশের গাড়িচালক মোজাহারুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ও আমেজ উদ্দিন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। তাঁদের সহায়তাকারীদেরও কোনোভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না। আমরা আশা করব স্থানীয় প্রশাসন ভুক্তভোগী পরিবারটির পাশে দাঁড়াবে।