মাঠপর্যায়ে সেবা নিশ্চিতে বিনিয়োগ বাড়ান

সম্পাদকীয়

দেশে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য অবকাঠামোর করুণ অবস্থার চিত্র প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উল্টো উন্নয়নের দাবি করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিকস বিভাগের গবেষণায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামোর অপ্রতুলতার যে চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। অবকাঠামো-সংকটে চিকিৎসকেরা চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে যেমন অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ ও বিড়ম্বনার মুখে পড়েন, আবার জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সর্বজনীন চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হন। 

বিএসএমএমইউর গবেষণার বরাত দিয়ে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, দেশের ৫৯ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক্স-রে করা হয় না। এর কারণ হলো এক্স-রে মেশিন হয় নষ্ট অথবা নেই। ৪১ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রক্ত পরিসঞ্চালন পরিষেবা নেই। ৬৩ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) নেই। ৭৩ শতাংশ উপজেলা হাসপাতালে ইসিজি হয় না। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়কালে দেশের ৯টি জেলা হাসপাতাল ও ১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। জরিপের আওতাধীন একটি জেলা হাসপাতালেও চিকিৎসকদের ব্যবহার উপযোগী ডরমিটরি বা কোয়ার্টারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এসবের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পদে জনবল না থাকার তথ্যও উঠে এসেছে।

উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অবকাঠামো ও জনবল-সংকটের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপ ও প্রভাবের কারণেও চিকিৎসাসেবা প্রদানে বাধা তৈরি হয়। সংবাদমাধ্যমের খবরে এ তথ্য বারবার উঠে এসেছে। বিএসএমএমইউর গবেষণায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো। 

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে রোগী ও তাঁর স্বজনদের পকেট থেকে ব্যয় করতে হয় ৬৫ শতাংশ অর্থ। এতটা ব্যয় নির্বাহ করা বেশির ভাগের পক্ষে দুঃসাধ্য হওয়ায় রোগব্যাধি প্রকট না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা সম্ভব হলে দুর্ভোগ ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা থেকে মুক্ত থাকা যায়। 

উপজেলা-জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বাংলাদেশের বড়সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা নেন। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা যে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, নিঃসন্দেহে সেটিই স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। যেকোনো মূল্যেই এ বাধা অতিক্রম করা প্রয়োজন। নাগরিকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। হাসপাতালের শূন্য পদে জনবল নিয়োগ, আবাসিক সুবিধা নিশ্চিতসহ গবেষকেরা যেসব সুপারিশ করেছেন, তা বাস্তবায়ন জরুরি। মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।