মানিকগঞ্জ পৌরসভা ১৯৯৭ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু এর আড়াই দশক পেরিয়ে গেলেও পৌরবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানির মতো মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পৌর এলাকার চারটি ওয়ার্ডের তিন হাজারের বেশি গ্রাহক যে বিশুদ্ধ পানির ভয়াবহ সংকটে ভুগছেন, তা পৌর কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতাই বলতে হবে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পৌরবাসীর কাছে সপ্তাহে মাত্র দু-তিন দিন পানি আসে, তা–ও নোংরা, আয়রনযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর। অথচ পৌরবাসী মাসে নিয়মিত ৩৫০ টাকা বিল পরিশোধ করছেন। টাকা দিয়েও বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে পৌরবাসী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, ‘পানিকে জীবন বলা হয়। পানির কারণে আমাদের জীবন বিপন্ন অবস্থা।’
এ সংকটের মূল কারণ অনুসন্ধানে গেলে পৌর কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার চিত্র সামনে আসে। ১৯৯৬ সালের পুরোনো শোধনাগারটির কথা বাদ দিলেও ২০১৭ সালে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের পূর্ব দাশড়া এলাকায় যে নতুন শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটি বেহাল কেন? সহকারী প্রকৌশলী গোলাম জাকারিয়া লিটন স্বীকার করেছেন, চারটি ফিল্টারের মধ্যে দুটিই অকেজো ও পাঁচটি উৎপাদক নলকূপের একটি বিকল। অর্থাৎ ১০ কোটি টাকার প্রকল্প মাত্র দুই বছরের মধ্যে অচল হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হলো, এত ব্যয়বহুল প্রকল্পের মান নিয়ন্ত্রণে কোথায় ত্রুটি ছিল? প্রকল্পের সময় কেন টেকসই ফিল্টার ও পাম্প নিশ্চিত করা হলো না? এই ১০ কোটি টাকার অপচয় বা দুর্বল নির্মাণ নিয়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এখনো কার্যকর কোনো জবাবদিহি নিশ্চিত করেনি।
ফিল্টার ও পাম্প অকেজো থাকার অর্থ পুরোটাই ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতার দায় কোনোভাবেই ভুক্তভোগী গ্রাহকদের ওপর চাপানো যায় না। নাগরিক দুর্ভোগ চরমে পৌঁছানোর পরও কর্তৃপক্ষের ভূমিকা আরও বেশি হতাশাজনক। কারণ, সমস্যা সমাধানে তাদের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি সম্প্রতি যোগদান করা পৌরসভার প্রশাসক (উপপরিচালক) শাহনাজ সুলতানা পানি নিয়ে এ সংকট ও পৌরবাসীর দুর্ভোগের বিষয়টি জানেনই না। রাষ্ট্রের নাগরিক ও রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের সুযোগ–সুবিধায় কতটা পার্থক্য থাকলে একজন প্রশাসক জানেনই না তাঁর অধীন নাগরিকেরা কী ধরনের পানি ব্যবহার করছেন। এক দিন বা এক সপ্তাহ আগেও যদি দায়িত্ব গ্রহণ করেন, পানি তো নিত্যদিনের ব্যবহার্য বিষয়; তার মানে কর্তৃপক্ষ ও পৌরবাসীর প্রতি সরবরাহ করা পানির মান আলাদা? সেটিই যদি সত্যি হয়, তাহলে নগরবাসীর নাগরিক সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কীভাবে আন্তরিক হবেন পৌরসভার কর্তারা?
শুধু মানিকগঞ্জ নয়, প্রথম শ্রেণির আরও অনেক পৌরসভার ক্ষেত্রে পানির সমস্যা, বর্জ্য অব্যবস্থাপনাসহ নানা ধরনের নাগরিক দুর্ভোগ রীতিমতো স্থায়ী হয়ে গেছে। এর থেকে কি কোনো পরিত্রাণ মিলবে না?