নির্মাণকাজ আর কত দিন ঝুলে থাকবে

বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মাতৃভূমির প্রতি তাঁদের দায়বোধ ও অপরিসীম ত্যাগের কোনো তুলনা হয় না। তাঁদের অসমসাহসিকতাপূর্ণ জনযুদ্ধ ছাড়া কি এই স্বাধীন দেশের জন্ম সম্ভব হতো? বর্তমান সরকার দেশের জন্য বীরত্ব দেখানো এসব মানুষের সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করেছে। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও প্রয়াত যুদ্ধবীরদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নেওয়া হয়েছে বীর নিবাস নামের আবাসন প্রকল্পও। কিন্তু কোথাও কোথাও সেই নিবাসের নির্মাণকাজ নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় প্রায় দুই বছর আগে পেরিয়ে গেলেও সেখানকার বীর নিবাসের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়নি। নয়টির মধ্যে চারটি বীর নিবাসের কাজ এখনো বাকি। এ অবস্থায় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অন্যের বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় বীর নিবাস তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক বীর নিবাসের নির্মাণকাজ শেষে সুবিধাভোগীদের কাছে বুঝিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ধর্মপাশা ও মধ্যনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার অপেক্ষায় দিন গুনছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বীর নিবাসের কাজ শেষ না করায় মানববন্ধনও করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা।

উপজেলা দুটির আটটি গ্রামে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৯টি বীর নিবাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ কাজের জন্য ১ কোটি ২০ লাখ ৯২ হাজার টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজটি পায় মেসার্স জব্বার বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ধর্মপাশার উপজেলা প্রশাসন একবার ব্যবস্থা নিলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ঠিকাদার মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন এই কাজ বাবদ এক লাখ টাকা আমাকে দিয়ে তিনি কাজটি নিয়েছেন। কাজটি সময়মতো শেষ না করায় আমি ও আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।’ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘এই কাজে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য একটি পক্ষ এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে আসছে।’ পরস্পরকে দোষারোপের মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, এখানে ঠিকাদারি নিয়ে গোঁজামিল তৈরি হয়েছে, যার ভুক্তভোগী হচ্ছে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার। আমরা দুই উপজেলার প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাব, ঠিকাদার ও উপজেলা চেয়ারম্যান নিয়ে বসে বিষয়টির দ্রুত সমাধান করা হোক। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি প্রশংসনীয় প্রকল্প নিয়ে এমন কাণ্ড কোনোভাবে কাম্য নয়।