নষ্ট হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

কার্যকর ও সার্থক প্রকল্পের জন্য দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনা যে প্রয়োজন, সে সত্যটা এ দেশে সহজে কেউ স্বীকার করেন না। সরকারি প্রকল্পের ধরন, প্রকরণ ও ব্যয়–প্রক্রিয়া দেখে মনে হয়, নীতিপ্রণেতারা ধরেই নিয়েছেন প্রকল্প-পরিকল্পনার খুঁটিনাটি নিয়ে বিশদ আলাপ সময় নষ্ট করার শামিল। ফলে অধিকাংশ প্রকল্প বিপুল ব্যয়ে অশ্বডিম্ব প্রসব করে থাকে। দেশের প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ গণনা করতে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ প্রকল্পের প্রকৃতি সেই ধরনের ভাবনার উদ্রেক করে।

এই প্রকল্পের আওতায় দেশজুড়ে ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের তথ্য সংগ্রহ করতে ৪৪৭ কোটি টাকায় প্রায় চার লাখ ট্যাবলেট পিসি (ট্যাব) কিনেছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ট্যাবগুলো যাতে বৃষ্টিতে না ভেজে, সে জন্য তিন কোটি টাকায় পানিরোধক ব্যাগ আর তথ্য সংগ্রহকারীরা যাতে না ভেজেন, সে জন্য মাত্র সাত দিনের তথ্য সংগ্রহ কাজে ১৩ কোটি টাকায় সাড়ে চার লাখ ছাতা কেনা হয়েছিল। জনশুমারি শেষ। এখন ট্যাবগুলো পড়ে আছে। সেগুলো এখন নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে।

ট্যাব কেনার পরিকল্পনায় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সে সময় জনশুমারির পর এগুলো কোথায় ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে ভাবার সময় পাননি। এখন কর্মকর্তারা চাইছেন যত দ্রুত সম্ভব সেগুলো কোথাও ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হোক। বিবিএস ট্যাবগুলো কোন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যায়, তার ওপর মতামত দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বলছে।

স্পষ্টতই এই ট্যাব কেনার পরিকল্পনায় গলদ ছিল। সাত-আট দিন ব্যবহারের পর এত ট্যাব কোথায় কাজে খাটানো হবে, তা ঠিক না করার এই গলদ কোনো মহলের আর্থিক স্বার্থ রক্ষার্থে ইচ্ছাকৃত নাকি নির্জলা অনিচ্ছাকৃত, সেটি অবশ্য প্রমাণসাপেক্ষ। তবে তা ইচ্ছাকৃতই হোক আর অনিচ্ছাকৃতই হোক, বাস্তবতা হলো ট্যাবগুলো কাজে লাগাতে না পারলে শিগগিরই তা ‘ভাঙারির’ খাতায় উঠবে। তখন ভাঙারি হিসেবে এর একটা ‘গতি’ করার একটি নতুন ‘সুযোগ’ তৈরি হবে। সেই প্রক্রিয়ায় নতুন করে অন্য কারও আর্থিক স্বার্থ উদ্ধারের সুযোগ হবে কি না, সেই প্রশ্নও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।

তবে আশার কথা, বিবিএস ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে এসব ট্যাব থেকে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৫টি ট্যাব ব্যবহারের আবেদন এসেছে। তাদের কাছে গেলে হয়তো এগুলো কাজে লাগতে পারে। তবে আরও ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৫টি ট্যাব কাকে দেওয়া যায়, সে উপায় এখনো অজানা। এ নিয়ে একেকজন একেক মত দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের দেওয়া হোক। কেউ বলছেন, শিক্ষকদের দেওয়া হোক।

বিপুল অঙ্কের টাকায় এসব ট্যাব কেনার আগেই ভাবা উচিত ছিল পরে কী কাজে ব্যবহৃত হবে, তার উপায় খুঁজে বের করা। যেহেতু তা হয়নি, এখন তা কোন প্রক্রিয়ায় কোন খাতে খাটালে যথার্থ কাজে লাগবে, সেটি দ্রুত খুঁজে বের করা দরকার। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প অনুমোদনের শর্ত হিসেবে প্রকল্প শেষে সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কী কাজে লাগবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনা জমা দেওয়ার বিধান রাখা দরকার।