কোনোভাবেই অবহেলার সুযোগ নেই

সম্পাদকীয়

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গু প্রবলভাবে হানা দিচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে শুধু ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম ছিল। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, শক্তিশালী আরেকটি ভাইরাসের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল ডেঙ্গু। পরের বছর করোনার সংক্রমণ কমতেই আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। চলতি বছর এ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪ জন। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হার এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে। ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো বড় শহর ছাড়িয়ে কক্সবাজারে কেন ডেঙ্গুর এমন প্রকোপ দেখা গেল, সেটিই এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে রোগবিশেষজ্ঞদের কাছে।

বছরের এ সময়, মানে জুনের মাঝামাঝি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায়ই থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। যার কারণে বাড়ির আশপাশে, ছাদের টবে ও চৌবাচ্চায় পানি জমে যায়। এসব জমে থাকা পানিতেই জন্মায় ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা। ফলে সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এডিস মশার বিস্তার থাকে অনেক বেশি। সময়টাকে ডেঙ্গুর মৌসুমও বলা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা মশা জরিপ করে থাকে। তাদের এবারের জরিপে দেখা গেছে, আগের দুই বছরের তুলনায় ২০২২ সালে মশার পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। রাজধানীর চলমান মেগা প্রজেক্ট ও বড় আবাসন প্রকল্পগুলোর মশা পরিস্থিতি তাদের পক্ষে দেখা সম্ভব হয়নি বলে আমরা জানতে পারছি। তার মানে এবারের মৌসুমে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে একটি আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

প্রতি মৌসুমে ডেঙ্গু–আতঙ্ক ছড়ালেও এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে টেকসই কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। ডেঙ্গু বেড়ে গেলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু প্রকোপ কমে গেলে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশকে আর গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বিষয়টি হতাশাজনক। এ মুহূর্তে সরকারের স্থাপনা, রাস্তাঘাট, উন্মুক্ত স্থান, নির্মাণাধীন স্থাপনা—কোথাও পানি জমার সুযোগ না দিতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে সিটি করপোরেশনকে। মশকনিধন অভিযানে কোনোভাবে অবহেলার সুযোগ নেই। এডিসের প্রজনন উৎস পাওয়া গেলে ভবনমালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নগরবাসীকে সতর্ক করে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো। নাগরিকদেরও দায়িত্ব তাঁদের ব্যক্তিগত পরিসর ও আশপাশে কোথাও পানি জমতে না দেওয়া।

করোনা মহামারির ধকল মানুষ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতিতে ভুগতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু রোগ যাতে তাদের জন্য আরেক দুশ্চিন্তার কারণ না হয়। মৌসুমের শুরুতেই সরকারের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে আমরা কার্যকর ভূমিকায় দেখতে চাই।