দখল–দূষণমুক্ত করতে আন্তরিক উদ্যোগ নিন

ভাটির দেশ হিসেবে নদ–নদী–খালের আধিক্যই আমাদের ভূমিগত ও প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য। যার কারণে নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জোরালো পরিচিত ছিল একসময়। দিন দিন নদ–নদী–খালের অস্তিত্বহীনতায় সেই পরিচয়ে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নদীই যদি না বাঁচে, দেশ বা দেশের মানুষ বাঁচবে কী করে? এর উত্তর আমাদের সবার জানা থাকলেও করার যেন কিছুই নেই। যে কারণে একসময়ের প্রবল স্রোতের নদী চোখের সামনে মরে যেতে থাকে। রাজশাহী জেলার হোজা নদীই তার করুণ উদাহরণ।

দুর্গাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থান হোজা নদীর। এটির দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটার। কিন্তু এর ৯ কিলোমিটারেই পানির প্রবাহ নেই। অনেক স্থান দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। আবার কোথাও কোথাও পুকুর কেটে মাছ চাষ করা হচ্ছে। নদ–নদী দখলের এই প্রবণতা এখন প্রকট হয়ে উঠেছে। এর মধ্য দিয়ে নদ–নদীর চরিত্রই পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। দেশজুড়েই এমন ঘটনা ঘটছে। 

দখল ছাড়াও ময়লা–আবর্জনা ফেলায় হোজা নদী ভরাট হয়ে গেছে। এভাবে দূষণ ও ভরাট হয়ে যাওয়া নদী দখলকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করে। আমাদের নাগরিকবোধে যথেষ্ট পরিপক্বতা না আসার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে নদ–নদী–খালে ময়লা আবর্জনা ফেলা।

এখানে আরও দুঃখজনক হচ্ছে তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্গাপুর পৌরসভা নিজেই এ কাজ করছে। পৌরসভার সিংগাবাজার অংশের সেতুর দুই পাশে পৌর এলাকার সব ধরনের ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে ওই সেতুর দুই পাশের ২০ শতাংশ জমি ভরাট হয়ে গেছে। এখন সেতুর দুই পাশে নদীর জায়গা অচিরেই দখল হতে দেখলে আমরা অবাক হব না।  

দুর্গাপুর পৌরসভা মেয়র সাজেদুর রহমান বলেন, পৌরসভার আবর্জনা ফেলার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। তাঁরা ইতিমধ্যে পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। তাঁরা বর্জ্য ফেলার জন্য জমিও খুঁজছেন। তাঁর এ বক্তব্য নতুন কিছু নয়। দেশের অন্যান্য পৌর কর্তৃপক্ষ থেকে এমনটা শুনে থাকি আমরা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া কীভাবে পৌরসভাগুলো এভাবে চলছে, তা আমাদের বুঝে আসে না।

এ ছাড়া নদী দখল ও পুকুর কেটে মাছ চাষ কীভাবে অবাধে করতে দেওয়া হচ্ছে? এখানে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো কী করছে? একসময় নৌকা চলা এ নদীর এমন হাল কেন, তা আমরা জানতে চাই। হোজা নদী দখল–দূষণমুক্ত করতে আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।