প্রশাসন ও পুলিশকে কঠোর হতে হবে

সম্পাদকীয়

নোয়াখালীর হাতিয়ায় মেঘনার বুকে জেগে ওঠা নতুন চরের দখল নিয়ে তিন বাহিনীর ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে ছয়জনের নিহতের ঘটনা কেবল একটি আইনশৃঙ্খলার অবনতি নয়, বরং এটি উপকূলীয় জনপদে বিচারহীনতা ও পেশিশক্তির বহিঃপ্রকাশ। দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর ধরে জেগে ওঠা ‘জাগলার চর’ যেখানে বন বিভাগের বনায়ন আর সাধারণ মানুষের পশুপালনের চারণভূমি হওয়ার কথা ছিল, সেখানে আজ লাশের রাজনীতি ও দখলের লড়াই চলছে। এটি থামাতেই হবে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ‘কোপা শামছু বাহিনী’, ‘আলাউদ্দিন বাহিনী’ এবং ‘ফরিদ কমান্ডারের বাহিনী’ নামক তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এই সরকারি খাসজমিকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তির মতো কেনাবেচা করছে। যখন যে রাজনৈতিক দলের প্রভাব থাকে, সেই দলের ছায়াতলে থেকে অপকর্ম চালিয়ে যায় সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো। ফলে তাদের কোনোভাবে থামানো যাচ্ছে না। এই ‘রাজনৈতিক সুবিধাবাদ’ আমাদের গ্রামীণ জনপদে অপরাধের শিকড়কে আরও গভীরে নিয়ে যাচ্ছে।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো প্রশাসনের ভূমিকা। এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান উঠলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফলে ছয়টি প্রাণ ঝরে যাওয়ার ঘটনা দেখতে হলো। স্থানীয় সরকার ও বন বিভাগ যেখানে বলছে এই চর কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি, সেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে একরপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকায় জমি বিক্রি করার ক্ষমতা কোথা থেকে পায় এই বাহিনীগুলো?

বিগত দিনগুলোতে দেখা গেছে, উপকূলীয় চরাঞ্চলগুলোতে আধিপত্য বিস্তার ও ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো এসব ‘ডাকাত’ বা ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ লালন-পালন করে এসেছে। হাতিয়ার এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে যে মাঠপর্যায়ে এখনো সেই পুরোনো ও নোংরা দখলের সংস্কৃতি বিদ্যমান। স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপ করলেও প্রকৃত সত্য হলো সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই, কিন্তু তাদের আশ্রয়দাতাদের নাম প্রশাসন ও পুলিশের অজানা নয়।

আমরা মনে করি, হাতিয়ার এই রক্তপাত বন্ধ করতে হলে কেবল লাশ উদ্ধার বা ময়নাতদন্ত যথেষ্ট নয়। অবিলম্বে এই তিন বাহিনীর মূল হোতা ও তাদের নেপথ্যের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনতে হবে। লুণ্ঠিত হওয়া সরকারি খাসজমি উদ্ধারে নৌবাহিনী ও পুলিশের যৌথ চিরুনি অভিযান প্রয়োজন। একই সঙ্গে নির্বাচন সামনে রেখে চরাঞ্চলগুলোতে যেন নতুন করে কোনো রক্তপাতের ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের। রক্তক্ষয়ী এই চর দখলের খেলা বন্ধ করতেই হবে। এর জন্য কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।