জমির বিরোধ মেটান, শিক্ষার পরিবেশ ফেরান

সম্পাদকীয়

দেশের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নানা বরাদ্দও দেওয়া হচ্ছে। সেই বরাদ্দ কাজে লাগিয়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলো নানাভাবে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা মনে আনন্দ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। তবে ফরিদপুরের কুমারকান্দার একটি সরকারি বিদ্যালয় উন্নয়নের সেসব আলো থেকে একেবারেই বঞ্চিত। রংহীন এক জীর্ণ পরিবেশে পাঠদান চলছে। জমির বিরোধের কারণে বিদ্যালয়টির অবস্থা বেহাল।

্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৩ সালে এলাকার এক পরিবারের তিন ভাইয়ের দান করা জমির ওপর গড়ে ওঠে ফরিদপুরের কুমারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই জমিতে ১৯৯২ সালে নির্মিত হয় চার কক্ষের বর্তমান একতলা ভবন। ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়ার পর ওই বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করে আরেকটি পক্ষ। তবে নিম্ন আদালত, হাইকোর্টসহ তিনটি মামলার রায় যায় বিদ্যালয়ের পক্ষে। অপর পক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে, যা এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন।

জমির মালিকানা নিয়ে একের পর এক মামলার কারণে বিদ্যালয়টির উন্নয়ন থমকে আছে। বর্তমানে ২৫০ জন শিক্ষার্থী ও ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন এ বিদ্যালয়ে। মাত্র চারটি কক্ষ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে একটি কক্ষ ব্যবহার করা হয় শিক্ষকদের বসার জন্য। বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে। মাঝেমধ্যে পলেস্তারা খসে পড়ে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে। বিদ্যালয়ের মাঠ খানাখন্দে ভরা, খেলাধুলার অনুপযোগী। মাঠের এক পাশে বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিশিয়ে গোয়ালঘর নির্মাণ করেছেন জমির মালিকানা দাবি করা একটি পক্ষ। আবার ২৫০ শিক্ষার্থীর জন্য বিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটিমাত্র শৌচাগার।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় ওয়াশ ব্লক নির্মাণ, আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল ও একাধিক শৌচাগার স্থাপন, শহীদ মিনার ও নতুন ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। এগুলোর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজ করা যাচ্ছে না বিরোধিতার কারণে। শেখ রাসেল কর্নার ও প্রাক্‌-প্রাথমিকের কক্ষ তৈরি করা যাচ্ছে না। বাগান করা, বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ সরকারের নানা উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে। আমরা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে রয়েছি।’

প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ওই এলাকার একমাত্র সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে অভিভাবকেরা বিদ্যালয়টির এমন দুরবস্থা মেনে নিতে পারছেন না। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও জমিদাতার সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু মামলা থাকায় কিছু করা যাচ্ছে না।

আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সব পক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে বসে বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নেবেন। দ্রুত আইনি জটিলতা নিষ্পত্তি হোক, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসুক।