পাটের কর্ণধারেরা করেনটা কী

সম্পাদকীয়

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাটের মোকাম সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। কিশোরগঞ্জের ভৈরব, পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর, বাজিতপুর, করিমগঞ্জ থেকে পাট এসে এখানে জড়ো করেন পাটচাষি ও বিক্রেতারা। নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ব্যবসায়ীরা এই পাট কিনে নিয়ে যান।

এ বছর পাটের দর পড়েছে। কটিয়াদীর ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। লাখ টাকা পর্যন্ত পুঁজি হারিয়েছেন কেউ কেউ। গত কয়েক বছরে কটিয়াদীর মোকামে ব্যবসা ছেড়েছেন অন্তত ৩০ জন।

বর্তমানে ৭০ জন পেশায় টিকে আছেন, তাঁরাও নিয়মিত নন। এর কারণ কী জানতে চাইলে তাঁরা বলেছেন, পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে না। তাই পাটের দাম পড়তি। ব্যবহার বাড়ানো গেলেই সব সমস্যার সমাধান হতো। তা ছাড়া একের পর এক সরকারি মিল বন্ধ হয়েছে, ক্রয়কেন্দ্রগুলোরও কোনো কার্যকারিতা নেই।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং পাট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ঢুকলে যে কেউ বুঝতে পারবেন এই অবস্থার জন্য সরকার দায়ী। পাটের গুরুত্ব বুঝতে পেরে এ নিয়ে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, একাধিক আইন, বিধি এবং লোকবল আছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন পান, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের গাড়ি আছে, অফিসগুলোয় কম্পিউটার আছে। এত এত আয়োজনের পরও পাটচাষি, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত কেন? মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে তাঁরা নিজেদের যে মূল্যায়ন করেছেন, তাতে ১০০–তে ১০০ পেয়েছেন।

তাঁরা এই নম্বর পেয়েছেন সভা, কর্মশালা, অকেজো মালামাল বিক্রি, অপ্রয়োজনীয় নথি নষ্ট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রকল্প শেষে গাড়ি, কম্পিউটার, আসবাবের বিহিত করে। তাঁদের কর্মকাণ্ডের কোথাও পাটের বা পাটচাষিদের কথা নেই। এমনকি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনেও তাঁরা পাট ও পাটজাত পণ্যকে জনপ্রিয় করার কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন, তার প্রমাণ নেই।

আছে দোয়া মাহফিল, রচনা প্রতিযোগিতা, পাটবিষয়ক উক্তি দিয়ে মন্ত্রণালয় সাজানো ইত্যাদি কাজ। প্রকল্পের মধ্যে আছে বিভিন্ন জেলায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভবন নির্মাণ। কেন পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ অনুসরণ করা হচ্ছে না, তার কোনো আলাপই নেই।

পাট গবেষণাকেন্দ্র যা করছে, তা-ও কি যথেষ্ট? তারা বলছে স্বল্প মূল্যের হালকা শপিং ব্যাগসহ ছয়টি নতুন পাটপণ্য তারা উদ্ভাবন করেছে। পাট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, করপোরেশন কি এসব পণ্যের প্রসারে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে? নিলে তো কটিয়াদীর মোকামের ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে হতো না। সারা দুনিয়ায় পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের কথা বলা হচ্ছে।

আমাদের দেশে পাট দিয়ে পলিথিনের বিকল্প উদ্ভাবন হলো, কিন্তু তা একবার চোখে দেখার সুযোগ হলো না সিংহভাগ মানুষের। যে পাট আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে, তার ওপর নির্ভরশীল মানুষকে বাঁচিয়ে রাখবেন, না মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরকে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেবেন, সেটা রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়।