শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক নড়েচড়ে বসুন

সম্পাদকীয়

ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বলছে, তাদের লক্ষ্য হলো দক্ষ, আধুনিক ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমিসংক্রান্ত জনবান্ধব সেবা নিশ্চিত করা। এর অংশ হিসেবেই পুরো ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনের কাজ চলছে। ঘরে বসেই গ্রাহকের হাতে পরচা পৌঁছানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে সে কারণে।

ভূমি নিয়ে জটিলতায় মানুষ অস্থির। নিঃসন্দেহে এই চেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, শরীয়তপুরে গ্রাহকেরা সময়মতো পরচা হাতে পাচ্ছেন না। কেন পাচ্ছেন না, তার কোনো কারণও তাঁরা জানতে পারছেন না। অথচ ডাকযোগে পরচা হাতে পেতে তাঁদের নির্ধারিত ফির চেয়ে ৪০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।

বিষয়টি দাঁড়িয়েছে এমন যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে বরং পরচা সংগ্রহ করতে কম সময় লাগছে। আগে গ্রাহকেরা কার্যালয়ে গিয়ে ফরম আনতেন, নির্ধারিত ফরম পূরণ করে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের মধ্যে রেকর্ড রুম থেকে পরচা হাতে পেতেন। এখন গ্রাহকেরা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। আবেদনের দুই সপ্তাহের মধ্যে ডাকযোগে পরচা হাতে পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু ১৪ থেকে ১৭ মাস পর মানুষ জানতে পারছেন যে তাঁরা ডাকযোগে পরচা পাবেন না। সরাসরি রেকর্ড রুমে গিয়ে সংগ্রহ করতে হবে।

এ নিয়ে শরীয়তপুর রেকর্ড রুম ডেপুটি কালেক্টর আবদুর রহিম বলেন, সার্ভারে যেসব পরচা সংরক্ষিত নেই, সেগুলো তাঁরা দিতে পারছেন না।

এখানে প্রশ্ন হলো দুটি। প্রথমত, গ্রাহক ডাকযোগে পরচা পেতে যে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করছেন, সেই টাকা কি তিনি ফেরত পেয়েছেন? দ্বিতীয়ত, অপারগতার কথা জানাতে এত সময় কেন লাগছে? গুগল মানচিত্র অনুযায়ী, ঢাকা থেকে হেঁটে শরীয়তপুর পৌঁছাতে সময় লাগে ১৬ ঘণ্টা। সেখানে জেলা প্রশাসনের পাঠানো চিঠি গ্রাহকের হাতে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১০ হাজার ঘণ্টার বেশি। এমনও নয় যে প্রশাসন থেকে যে চিঠি পাঠানো হচ্ছে, তা অতি দীর্ঘ বা ভারী।

লেখা হচ্ছে, সার্ভারে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকায় ডাকঘরের মাধ্যমে পরচা পৌঁছানো যায়নি। আবার হাজার হাজার গ্রাহক ডাকযোগে পরচা পেতে চাইছেন, তা-ও নয়। গত বছরের জুন থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরে অনলাইনে পরচার জন্য ৪২ হাজার ৭৭০টি আবেদন করা হয়েছে। আর ডাকযোগে পরচার আবেদন করেছেন ৭৮৮ জন গ্রাহক।

প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেছেন, কেন ডাকযোগে চিঠি পৌঁছাতে এত সময় লাগছে, তিনি খতিয়ে দেখবেন। এত দিন ধরে মানুষ ডাকযোগে পরচা পেতে কষ্ট করছেন। অথচ জেলা প্রশাসকেরা জানতেই পারেননি। এ বড় অদ্ভুত ঘটনা। আমরা আশা করব, দ্রুত তিনি এই সমস্যার সুরাহা করবেন।