অবৈধ গ্যাস বিক্রি দ্রুত বন্ধ করা হোক

সম্পাদকীয়

দেশে প্রায় সময়েই গ্যাস সিলিন্ডার বা রাসায়নিক গুদামে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। হতাহতের সংখ্যা কম হওয়ায় নিত্যকার এসব ঘটনা খুব একটা আলোচনায় আসে না। ফলে দুর্ঘটনা রোধে নেওয়া হয় না কার্যকর কোনো পদক্ষেপও। এতে রাজধানীর সিদ্দিকবাজার, মগবাজার বা টেকনিক্যাল মোড়ের মতো ভয়াবহ কোনো বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হয়। কেরানীগঞ্জে একের পর এক ছোটখাটো ঘটনায় তেমনটিই আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেখানে অবৈধভাবে ভ্রাম্যমাণ ফিলিং স্টেশন বসিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে গতানুগতিকভাবে প্রশাসনের নেওয়া ব্যবস্থা কোনো কাজে আসছে না। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বাদামগাছতলা এলাকার স্বদেশ গ্লোরি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। ওই ফিলিং স্টেশনের দুজন কর্মী দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন। ভ্রাম্যমাণ সিএনজি ফিলিং স্টেশনটির কোনো অনুমোদন ছিল না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দেখা যায়, প্রশাসনের অনুমোদন বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সনদ না থাকাটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে এ দেশে। 

কেরানীগঞ্জের গদাবাগ, রোহিতপুর, তারানগর ও আবদুল্লাহপুর এলাকায় কমপক্ষে ১২টি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রাম্যমাণ সিএনজি ফিলিং স্টেশন গড়ে উঠেছে। কার্গো ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে থাকা সিলিন্ডার থেকে প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে গ্যাস নিয়ে তা সিএনজি ডিসপেনসার যন্ত্রের মাধ্যমে যানবাহনে ভরা হচ্ছে। এসব ফিলিং স্টেশনের জন্য প্রশাসনের অনুমতি, ফায়ার সার্ভিস কিংবা বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সনদ, পরিবেশ ছাড়পত্র, কর্মীদের সুরক্ষায় নিরাপত্তাব্যবস্থা—কিছুই নেই। এসবের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থাও নেয়, কিন্তু তা অনেকটা গতানুগতিক ও লোকদেখানো। প্রশাসন অভিযান চালালে কয়েক দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আবার চালু করা হয়। কারণ, ফিলিং স্টেশনের মালিকেরা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। 

অনেক ফিলিং স্টেশন আবার দাবি করে থাকে, তারা বৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সব ধরনের কাগজপত্র তাদের রয়েছে। সেসব কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা তখন থানার কথা উল্লেখ করে থাকে। তার মানে কি অবৈধভাবে ফিলিং স্টেশন বসানোর ক্ষেত্রে থানা–পুলিশের যোগসাজশ আছে? এখানে বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তর কী করছে? 

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফয়সল বিন করিম বলেন, প্রশাসনের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া কোনো অবস্থাতেই ফিলিং স্টেশন চালাতে দেওয়া হবে না। তাঁর কাছে আমাদের প্রশ্ন, এত দিন তাহলে কী করে এসব ফিলিং স্টেশন চলছে? অবৈধ ফিলিং স্টেশনগুলোর মালিকদের কেন ধরা যাচ্ছে না? কার্গো ট্রাকে কী করে এসব সিলিন্ডার গ্যাস কেরানীগঞ্জে ঢোকে? এসব অনুমোদনহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ ফিলিং স্টেশন অতিসত্বর স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হোক।