প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট কাউকে ছাড় নয়

সম্পাদকীয়

কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে টাকা মারার ফন্দিফিকিরের শেষ নেই। অনেক সময় কোনোভাবে কাজ শেষ করে দেওয়া হয়। সেসব করতে গিয়ে টেকসই উন্নয়ন হয় না। সুফলভোগীদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। তাঁরা তখন প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের গালমন্দ করেন আর নিজেদের কপালের জন্য আফসোস করেন। তবে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় আটটি প্রকল্প নিয়ে সেটিও করার সুযোগ রাখেননি প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সেখানে কাগজে–কলমে প্রকল্পের কাজ দেখিয়ে পুরো টাকা গায়েব করে ফেলা হয়েছে। এটি শুধু চুরি নয়, রীতিমতো পুকুরচুরি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির অধীনে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় ৫৯৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এসেছিল। এর ভিত্তিতে ৯টি প্রকল্প নেয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। এসব প্রকল্পের একটি উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উন্নয়নকাজ হয়েছে। বাকি আটটি প্রকল্পের কোনো হদিস নেই। তবে কাগজে-কলমে সেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। স্থানীয়রাও এসব প্রকল্পের অধীনে কোনো কাজ হতে দেখেননি। 

বিনিময়ে বরাদ্দ বাবদ প্রায় ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকাও তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে আটটি প্রকল্পেই কোনো কাজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। কাজ না করে টাকা তুলে নেওয়া হলো আবার অনিয়মও হয়নি—এটি কী করে সম্ভব?

নীতিমালা অনুযায়ী কাবিখা কর্মসূচি (সাধারণ) প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহসভাপতি এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সদস্যসচিব। এখন লাখাই উপজেলার প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনও একে অপরের ওপর দায় চাপিয়েছেন।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলছেন, ‘তাঁরা (ইউএনও ও পিআইও) বিলে স্বাক্ষরের পর আমার স্বাক্ষর নিয়েছেন। কাজ না হয়ে থাকলে তদন্ত হলে তাঁরাই ফাঁসবেন। তবে আমি যতটুকু জানি, প্রকল্পের কাজ সবই হয়েছে। অন্যদিকে ইউএনও বলছেন, পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। তাঁরা কাজগুলো কীভাবে ছাড়পত্র দিয়েছেন, তাঁরাই এর উত্তর দেবেন। আবার পরবর্তী সময়ে অন্য উপজেলায় বদলি হয়ে যাওয়া প্রকল্পের সদস্যসচিব বা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দাবি, চাহিদার চেয়েও বেশি কাজ হয়েছে এ উপজেলায়। প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হয়নি।

প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রধান তিন দায়িত্বশীল ব্যক্তির দুজন বলেছেন, প্রকল্পের সব কাজই হয়েছে, কোনো অনিয়ম হয়নি। সেটিই যদি হয়ে থাকে, প্রকল্পের কাজের কোনো অস্তিত্ব কেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাজ শেষে বিশাল অঙ্কের টাকা তুলে নেওয়া হলো, অথচ তাঁরা কেউ দেখলেন না, ঠিকঠাকমতো কাজ হয়েছে কি না। গোটা বিষয়টির জন্য তিন দায়িত্বশীলকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এ বিপুল অঙ্কের টাকার হদিস তঁাদেরই দিতে হবে।