কবীর সুমন তাঁর গানে লিখেছেন, ‘আমি চাই গাছ কাটা হলে শোকসভা হবে বিধানসভায়’। প্রতীকী নয়, বাস্তবিক অর্থেই আইনপ্রণেতা, জনপ্রতিনিধি আর বন বিভাগের মতো কর্তৃপক্ষ চাইলে গাছ কাটা বন্ধ হতে পারে। অথচ আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখছি, দেশে গাছ হত্যার যে মহামারি চলছে, তাতে সরকারের সংস্থাগুলো উদ্যমী ও উৎসাহী ভূমিকা রাখছে।
সড়ক সম্প্রসারণ কিংবা অন্য কোনো অবকাঠামো নির্মাণে প্রতিনিয়ত গাছ কাটা চলছেই। সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে বন বিভাগের ভুল নীতির কারণে কাটা পড়ছে অসংখ্য গাছ। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, শরীয়তপুরের ছয়টি সড়কে মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে অপেক্ষা করছে ৪০০টি গাছ। আর গত ছয় মাসে কাটা পড়েছে ১ হাজার ৩০০টি গাছ।
শরীয়তপুরের ১০০ কিলোমিটার সড়কে বিভিন্ন সময় সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের গাছ রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি সড়কের ১৯ কিলোমিটার অংশের ১ হাজার ৭০০টি গাছ কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। রেইনট্রি, আকাশমণি, বকাইন, টিকরাশি, কড়ই, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছিল ১৫–১৬ বছর আগে। সড়কের দুই পাশে বড় গাছ থাকায় সব স্থানে রোদ্দুর থাকলেও সেখানে সুশীতল ছায়া ছিল। সেই ছায়ায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে পরিশ্রান্ত মানুষেরা কিংবা পথচারীরা বসে বিশ্রাম নিতে পারতেন।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সামাজিক বনায়নের আওতায় জমির মালিক, উপকারভোগী (রক্ষণাবেক্ষণকারী) ও বন বিভাগের মধ্যে ১০ বছরের চুক্তিতে ওই সব গাছ লাগানো হয়েছে। শরীয়তপুরের অধিকাংশ সড়কের ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই গাছ কেটে সেই স্থানে নতুন করে গাছ লাগানো হবে।
প্রশ্ন হলো, ১৫–১৬ বছর বয়সী একেকটা গাছের বিকল্প কি সদ্য রোপিত চারাগাছ হতে পারে? গাছ লাগানোর কয়েক বছরের মধ্যেই যদি সেই গাছ কাটতে হয়, তাহলে গাছ লাগানোর অর্থ কী? একটা বড় গাছ যে পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে, পরিবেশকে যতটা শীতল করতে পারে, পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে, তার বিকল্প কি চারাগাছ হতে পারে?
আমরা মনে করি, সামাজিক বনায়নের এই নীতি থেকে বন বিভাগের বেরিয়ে আসা দরকার। এ রকম মুনাফাকেন্দ্রিক নীতি শেষ পর্যন্ত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর দ্রুত বর্ধনশীল গাছ লাগানোর দিকে নিয়ে যায়। পরিবেশ, প্রকৃতি ও বাস্তুসংস্থানের কথা চিন্তা করে সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্র দেশীয় ঔষধি, বনজ ও ফলদ গাছ লাগানো প্রয়োজন। তাতে করে গাছ না কেটে উপকারভোগী ও বন বিভাগ দুই–ই লাভবান হতে পারে।