স্থানীয় প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না

সম্পাদকীয়

দেশের নৌপথে স্পিডবোট সংঘর্ষে প্রাণহানি বা হতাহতের ঘটনা নতুন নয়। দুর্ঘটনার পর বরাবরের মতোই বেরিয়ে আসে, স্পিডবোট হয়তো অবৈধভাবে চলছিল বা চালকের প্রশিক্ষণ নেই অথবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরাই সেই স্পিডবোট চালাচ্ছিল—এমন সব অভিযোগ। দুর্ঘটনার আগপর্যন্ত কারও খোঁজ থাকে না, সেই স্পিডবোট কীভাবে চলে।

যেমনটি আমরা দেখছি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীতে একটি দুর্ঘটনায়। সেখানে দুটি স্পিডবোটের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক কিশোর চালকের প্রাণহানি ঘটেছে। দুঃখজনক হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসনই স্পিডবোট দুটি সরকারি কাজে ভাড়া করেছিল।

্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত শনিবার রাতে স্পিডবোট দুটি চালাচ্ছিলেন ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর ও তার বাবা। তাদের কারোরই স্পিডবোট চালানোর সনদ (ড্রাইভিং লাইসেন্স) ছিল না। এমনকি ওই স্পিডবোট দুটি যে নৌপথে চলাচল করে, সেই নৌপথে স্পিডবোট চলাচলেরও কোনো অনুমতি নেই। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের অবহেলার মধ্য দিয়েই নৌপথটিতে অবৈধভাবে স্পিডবোটগুলো চলাচল করে থাকে।

সংঘর্ষে চালক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে এবং জেলা প্রশাসনের ৩ ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১১ জন আহত হয়েছেন। স্পিডবোট দুটি ভাড়া করেছিলেন ভেদরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এ ব্যাপারে ইউএনও রাজিবুল ইসলামের বক্তব্য হচ্ছে, দুর্গম পদ্মার চরের একটি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচনের কাজে যেতে নৌপথ ছাড়া উপায় ছিল না। তাই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনা-নেওয়ার জন্য কয়েকটি স্পিডবোট ভাড়া ও রিকুইজিশন করা হয়েছিল। ওই সব স্পিডবোটের চলাচলের অনুমতি আছে কি না, তা–ও তিনি জানতেন না। বোটগুলো কোনো নৌপথে অবৈধভাবে চলাচল করে কি না, সেটিও তিনি জানেন না। তিনি বলছেন, শনিবারের ঘটনাটি নিছক একটি দুর্ঘটনা।

যে নৌপথে স্পিডবোট চলাচলের অনুমতিই নেই, সেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা কী করে স্পিডবোট নিয়ে চলাচল করেন? সরকারি দায়িত্বের খাতিরে পরিস্থিতির কারণে তাঁরা যদি নিরুপায়ও হন, তাতেও এখানে একটি গুরুতর প্রশ্ন তৈরি হয়। ভাড়া নেওয়া তাঁদের সেই স্পিডবোটের চালক হিসেবে একজন কিশোর কীভাবে থাকে?

বিআইডব্লিউটিএর চাঁদপুর বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা থেকে আমরা জানতে পারছি, কোনো রুটে স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি থাকলেও সন্ধ্যার পর তা চালানো যাবে না। আর চালকদের সনদ (লাইসেন্স) ছাড়া তো কেউ চালাতেই পারবেন না। এসব অনিয়ম নৌ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন দেখে ব্যবস্থা নেবে।

দেখা যাচ্ছে, ইউএনওর ভাড়া নেওয়া এ স্পিডবোট চলছিল রাতে, তা–ও অনুমতিহীন রুটে। অথচ তিনি বলছেন, এ ঘটনা নিছক একটি দুর্ঘটনা। এমন মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ঘটনায় প্রাণহানির দায় কি উপজেলা প্রশাসনের ওপরও বর্তায় না?