সুন্দরবন রক্ষায় অবহেলার সুযোগ নেই

প্রকৃতিকে ঘিরেই গড়ে ওঠে পর্যটনকেন্দ্র। তবে পর্যটনকেন্দ্র গড়ার পেছনে সতর্ক ও মনোযোগী হতে হয় প্রকৃতির যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। কিন্তু আমাদের দেশে বিষয়টি উল্টো। প্রকৃতির ক্ষতি করেই যেন গড়তে হবে পর্যটনকেন্দ্র। ফলে সেন্ট মার্টিন থেকে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটের সংরক্ষিত বনাঞ্চল কিংবা খুলনার সুন্দরবন দিন দিন হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি তো আছেই। এসব জায়গায় হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ গড়ে তুলতে অনেক সময় মানা হচ্ছে না কোনো নিয়মকানুন। এমনকি নেওয়া হচ্ছে কর্তৃপক্ষের অনুমতি। দেশের পর্যটন খাতে এমন বিশৃঙ্খলা কি চলতে থাকবে?

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সুন্দরবনের পাশে একের পর এক গড়ে উঠছে ইকো রিসোর্ট ও কটেজ। এসব সুন্দরবনের মধ্যে না হলেও জায়গাটি বাস্তুসংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) আওতায়। এসব এলাকায় সাধারণত কোনো বসতি বা ইকোকটেজ নির্মাণ করতে গেলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। দেখা যাচ্ছে, খুলনার দাকোপ উপজেলার ঢাংমারী এলাকায় অনেকগুলো ইকোকটেজ ও রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, যেগুলোর কোনো পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। এমনকি কটেজ, রিসোর্ট গড়ে তোলার জন্য কোনো নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়নি। তার মানে যে যেভাবে পারছে, সেখানে ইকোকটেজ ও রিসোর্ট গড়ে তুলছে। 

এ ব্যাপারে সম্প্রতি খুলনা নগরে একটি কর্মশালার আয়োজন করে ইসলভ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব), খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক, খুলনা অঞ্চলের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার এবং খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক।

ইকোকটেজ গড়ে তোলায় গুরুত্ব দেওয়া হয় পরিবেশ রক্ষাকে। প্রকৃতি, পরিবেশ ও স্থানীয় জনপদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেটি এখানে প্রাধান্য পায়। কিন্তু ইকোকটেজগুলো সেভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে কি না, তা দেখছে কে? কর্মশালাটি থেকে আমরা জানতে পারছি, কটেজগুলোকে কমিউনিটি বেজড ইকোকটেজ বলা হলেও মূলত সেখানে স্থানীয় মানুষের সম্পৃক্ততা খুবই কম। ইকোকটেজের যেসব ধারণা সেখানে থাকার কথা, তা-ও নেই। 

২০১৮ সালেও বাগেরহাটের মোংলা, খুলনার দাকোপের ঢাংমারী ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকায় সুন্দরবনের পাশে অল্প কিছু সংখ্যক ইকোকটেজ ছিল। সেখানে এখন ইকোকটেজের সংখ্যা বেড়েছে ৭–৮ গুণ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে একসময় ইকোকটেজের নামে এই এলাকা বস্তিতে পরিণত হবে নীতিমালা না থাকলেও অনুমতি ছাড়া এসব ইকোকটেজ সেখানে কীভাবে গড়ে উঠছে? স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ সেখানে কী করছে? তাদের ভূমিকা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। সুন্দরবনের পাশে কত সংখ্যক ইকোকটেজ বা রিসোর্ট থাকতে পারবে, সেখানে পর্যটনের ধারণক্ষমতা কেমন হবে, সেটিও নির্দিষ্ট করা হোক সেই নীতিমালায়। আমরা চাই না রাঙামাটির সাজেক কিংবা সেন্ট মার্টিনের মতো একই পরিস্থিতি হোক সুন্দরবনের পাশে।