আইনজীবী ছাড়া সুফল পাওয়া কীভাবে সম্ভব

সম্পাদকীয়

দেশের নাগরিকদের আইনি সেবা নিশ্চিত করতে সরকার অনেক কার্যক্রমই হাতে নিয়েছে। কিন্তু সেগুলো কতটা সুফল দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ঠিক সময়ে সেবা না পাওয়া, অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়াসহ নানা জটিলতা তৈরি হয়েই আছে। বিশেষ করে ভুক্তভোগী যদি হন নারী, সেখানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া আরও বেশি দুঃখজনক।

মূলত যে কার্যক্রম ঘিরে এসব কথার অবতারণা, সেটি হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে দেশের ছয়টি বিভাগে এ সেলের কার্যক্রমের শুরু হয়।

স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর করা অভিযোগের নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে ঢাকায় ১৯৯১ সালে লালমাটিয়ায় সেলের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে সেটির অবস্থান ইস্কাটন এলাকায়। সেখানে নির্যাতনের শিকার নারীরা অভিযোগ নিয়ে আসেন কিন্তু সেসবের অনেকগুলোই আদালতে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, সেলটিতে কোনো আইনজীবী নেই।

অনেক নারী সেলে অভিযোগ নিয়ে আসেন। সেখানে পক্ষ–প্রতিপক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি হয়। অনেক সময় অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়, অনেক সময় কোনো সমাধান হয় না।

এখন সেলের প্রধান একজন ম্যাজিস্ট্রেট হলেও তাঁর কোনো বিচারিক ক্ষমতা নেই। ফলে সেলে নিষ্পত্তি না হওয়া অভিযোগগুলো আর আদালতে তোলা সম্ভব হয় না। ঢাকা সেলে ১৯৯২ সাল থেকে একজন আইনজীবী ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে অবসরে যান। এর পর থেকে কোনো আইনজীবী ছাড়াই চলছে সেলের কার্যক্রম।

শুধু ঢাকায় নয়; চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটের সেলেও আইনজীবী নেই। ঢাকা সেলের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, আইনজীবীর প্রয়োজনীয়তার কথা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু এত বছরেও কেন একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া গেল না?

সেলের সূত্রেই আমরা জানতে পারছি, সেলে গত বছরের জুন পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে মোট ৭ হাজার ৩৪৬টি অভিযোগ জমা হয়। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ৭ হাজার ২২৪টি। সেল থেকে দেনমোহর, ভরণপোষণ ও অন্যান্য বাবদ আদায় করে দেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকার বেশি।

এতেই বোঝা যাচ্ছে এ সেলের গুরুত্ব কতটুকু। এর গতিশীলতা বাড়ানোর দিকে আরও বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। সেটি করতে হবে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরকেই।

রাজধানীর মতো এত বড় শহরে একটি মাত্র সেল যথেষ্ট কি না, সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। তবে আমরা চাইব অতিসত্বর ঢাকাসহ বাকি শহরগুলোর সেলে দ্রুত আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হোক।