ব্যবস্থা নেওয়ার কথা খাদ্যসচিব প্রথম বলেছেন, তা নয়। এর আগে মন্ত্রীরাও বলেছেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বিশ্ববাজারে গমের দাম টানপ্রতি ২৫ ডলার কমার পরও বাংলাদেশে বাড়ার কারণ হিসেবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের দোহাই দেওয়া হয়। কেবল গম নয়, সব আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ডলারের দোহাই দেন। যদিও ডলার-সংকটের আগেও চালসহ খাদ্যপণ্যের দাম কেন বেড়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না।
চালের দাম বাড়ার পেছনে মিলমালিকদের কারসাজির বিষয়টি সর্বজনবিদিত। ভোক্তা অধিকারবিষয়ক সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, এক দল ব্যবসায়ী বছরের পর বছর কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে ভোক্তাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তাঁর এ কথার সমর্থন পাওয়া যায় প্রথম আলোর প্রতিবেদনেও। সরকার গত আমন মৌসুমে ৪২ টাকা কেজি দরে চাল কিনেছে। চালকলের মালিকেরাই সেই চাল সরবরাহ করেছেন। কেননা সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে খুব কম ধানই কিনে থাকে। কৃষক মিলমালিকদের কাছে ধান বিক্রি করেন আর মিলমালিকেরা সেই ধানকে চাল করে সরকার ও ভোক্তার কাছে বিক্রি করেন।
ভরা মৌসুমেও বাজারে মোটা চালের দাম এখন প্রতি কেজি ৪৮ টাকা থেকে ৫২ টাকার মধ্যে। অথচ সরকারের কাছে মিলমালিকেরা ৪২ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। মাঝখানে সরকার ৪৭ টাকা দরে বিদেশ থেকে চাল কিনে মিলমালিকদের দাম বাড়াতে সহায়তা করেছে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। বাজারের স্বাভাবিক ধর্ম হলো সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের উচিত বেশি বেশি পরিমাণ চাল টিসিবির মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো। এতে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা উপকৃত হবেন।
চালের বাজার নিয়ে মিলমালিকদের কারসাজি চলে আসছে বহু বছর ধরেই। এ নিয়ে সরকারের মন্ত্রী-সচিবেরা তাঁদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন। কিন্তু এসব বৈঠকের ফলাফল অনেকটাই শূন্য।
কারা কীভাবে চালের বাজারে কারসাজি করছেন, সেটা সরকারের নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোরও অজানা নয়। প্রশ্ন হলো বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? চালের বাজারের অস্থিতিশীলতা কাটাতে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। যাঁরা কারসাজি করে ভোক্তার পকেট কাটছেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনতেই হবে।