সাতক্ষীরা প্রশাসনের আরও তৎপরতা চাই

নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক জনজীবনের জন্য জলাশয় বা পুকুর অপরিহার্য। শুধু পরিবেশগত কারণে নয়, অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় দুর্ঘটনা মোকাবিলায়ও জলাশয় বা পুকুর বড় সহায়। কিন্তু লোকালয়ে পুকুর টিকিয়ে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় নগরগুলোতে পুকুর হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতেও নাগরিকতার ছোঁয়া লাগছে। জনসংখ্যার চাপ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দখলবাজির কারণে সেসব শহরের পুকুরগুলোও একের পর এক ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

যার বড় উদাহরণ হতে পারে সাতক্ষীরা শহরের পুকুরগুলো। একটি বা দুটি নয়, গত এক বছরে অন্তত ৩০টি পুকুর ভরাট করা হয়েছে সেখানে। সরকার আইন করে যেখানে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে এক বছরেই এতগুলো পুকুর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াটা খুবই দুঃখজনক। এখানে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্যর্থতাই প্রকাশ পায়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এক বছরে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার মিন্টু চৌধুরী, নূর আলী গাজী, ইটাগাছার আবুল কাসেম, পলাশপোল এলাকার নওশাদ চৌধুরী, আসাদুল মোল্যা, হাজু ঘোষ, আফতাবুজ্জামান, খুলনা মোড়ের আবদুর ছাত্তার, সুলতানপুর এলাকার তৌহিদুল ইসলাম, একই এলাকার বদরুজ্জামান ও মুজিবুর রহমান, মো. আলম, কাটিয়ার রেজাউল করিম, লুৎফর রহমান, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়সহ ৩০টি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। পুকুর ভরাট করে সেখানে মূলত ভবন তৈরি করা হচ্ছে। ফলে সুপেয় পানিসহ ব্যবহারের পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এমনিতেই সাতক্ষীরা জেলায় অধিকাংশ এলাকায় খাওয়ার পানির সংকট রয়েছে। সেখানে পুকুর ভরাটের ফলে সংকট আরও গভীর হচ্ছে। এ ছাড়া এখন কোথাও আগুন লাগলে আশপাশে সহজে পানিও পাওয়া যায় না।   

পুকুর ভরাটের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্যর্থতার দিকেই আঙুল তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের ভাষ্য, সঠিকভাবে তদারকি না করায় এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অবাধে পুকুরগুলো ভরাট করা হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা

পুকুর ভরাট বন্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের মতে, পুকুর ভরাট না করার বিষয়ে সভা-সমাবেশে বলা হয়, নানাভাবে সচেতন করা হয়। এ ছাড়া কোনো পুকুর ভরাটের খবর পেলে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমনকি পুকুর ভরাটকারীর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। 

তাহলে এক বছরে ৩০টি পুকুর ভরাট কী করে হলো? তার মানে এখানে কোথাও কোনো গাফিলতি আছে কিংবা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সাতক্ষীরার পুকুরগুলো বাঁচাতে আরও বেশি তৎপর হোন।