ত্বরিত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কড়া নজরদারিতে রাখছেন, তা সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট।

শুক্রবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহত ব্যক্তিদের দেখতে গিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁদের উন্নতমানের চিকিৎসা দিতে না পারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘প্রথম ব্যর্থতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর মতে, ব্যর্থতাটি হচ্ছে এখন পর্যন্ত আন্দোলন ঘিরে আহত ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত ও তাঁদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে না পারা। একই সঙ্গে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।

হাসনাত আবদুল্লাহর এই আহ্বানের পর শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষ ও সংঘাতে আহত ব্যক্তিদের সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ যাবতীয় ব্যয় সরকার বহন করবে। প্রতিটি হাসপাতালে গঠন করা হয়েছে আলাদা বিশেষ ইউনিট। এ ছাড়া বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসায় আপাতত বিল গ্রহণ না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতার সব বিল সরকার বহন করবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করি, তারা কেবল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করবে না, সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে তদারকি জারি রাখবে, যাতে আন্দোলনের সময় আহত কেউ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন। এখানে সমস্যা হলো শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে সারা দেশে কতজন আহত হয়েছেন, সেই হিসাব নেই। প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা ২৩ থেকে ২৭ জুলাই রাজধানীর মোট ৩৮টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সংঘর্ষ ও সংঘাতের ঘটনায় তখন আহত ৬ হাজার ৭০৩ জনের কথা জানা গিয়েছিল। এসব রোগী ১৬ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে হাসপাতালে এসেছেন। এরপরও অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছেন চিকিৎসাসেবা নিতে। 

আন্দোলন করতে গিয়ে যেসব তরুণ জীবন দিয়েছেন, তাঁদের আর ফিরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু আমরা আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে তো সুস্থ করতে পারি; যাতে তঁারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন। 

এই মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট সবার জরুরি কাজ হলো আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, কেউ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন না, এই নিশ্চয়তা কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ হওয়ায় অনেকের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করার কথা বলেছেন। এই সরকারে ছাত্র আন্দোলনের দুজন প্রতিনিধিও আছেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীরা আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার বিষয়টিকে যে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন, এটা ভবিষ্যতেও জারি থাকবে আশা করি। মনে রাখতে হবে, এই আন্দোলন সফল হয়েছে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এবং বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে।

আমরা আশা করব, অবিলম্বে আহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। এতে অন্তত স্বজনেরা মনে করতে পারবেন যে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য যাঁরা আহত হয়েছেন, তঁাদের কথা রাষ্ট্র ভুলে যায়নি।