অবৈধ ঘেরগুলো এখনই উচ্ছেদ করুন

সম্পাদকীয়

শীতকালে বাহারি শাকসবজিতে বাজার সরগরম থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতা ও ঘরের রাঁধুনির মনেও থাকে আনন্দ। শীতকালের সবজি মানে খাবারদাবারে অন্য রকম এক বৈচিত্র্য। এ সময় সবজির দামও কমে আসে। যদিও কয়েক বছর ধরে এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে; এরপরও নিত্যপণ্যের দামের তীব্র ঊর্ধ্বগতিতে সবাই শীতের ফলনের জন্য অপেক্ষা করছে।

শীতের ফলন বা রবিশস্যের চাষও শুরু হয়ে গেছে অনেক জায়গায়। আগাম কিছু পণ্য বাজারে চলেও এসেছে। তবে পাবনার সাঁথিয়ায় রবিশস্যের চাষে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। সেখানে মাছের অবৈধ ঘেরের কারণে পানিনিষ্কাশন না হওয়ায় রবিশস্যের আবাদ করতে পারছেন না তাঁরা।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সাঁথিয়ার অন্তত ১৫টি বিলের প্রায় ১০ হাজার বিঘা আমনের খেত জলমগ্ন হয়ে আছে। এ কারণে ধান কাটতেও দেরি হচ্ছে। ফলে সেখানে রবিশস্যের আবাদও করা যাচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রধান নিষ্কাশন খালের অন্তত পাঁচটি জায়গায় বাঁশের ঘের তৈরির কারণে এসব বিলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঘের নির্মাণকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু বলতেও পারছেন না চাষিরা।

সাঁথিয়ার এসব বিলে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়। এখন পেঁয়াজসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের চড়া বাজারমূল্যে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার কোনো কিছু করতে পারছে না।

ফলে মানুষ রবিশস্যের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি উপজেলায় ১৫টি বিলে রবিশস্যের আবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই মানা যায় না। কৃষকদের বক্তব্য, প্রতিবছর অক্টোবরের মাঝামাঝি জমি থেকে পানি নেমে যায়।

কিন্তু এ বছর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ২৫টির বেশি গ্রামের আমন খেতে এখনো ১ থেকে ৫ ফুট পানি জমে আছে। সেখানকার বিলগুলোর সঙ্গে কাগেশ্বরী নদীর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। এই পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ৩০ বছর আগে পাউবোই তৈরি করেছে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা—সবাই বিষয়টি জানেন। কেউ বলছেন সরেজমিন দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেউ বলছেন ঘেরগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং পানিনিষ্কাশনের খালে কোনো ঘের রাখা হবে না। এখন আমরা তাঁদের কথা ও কাজের প্রতিফলন চাই।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এমন কর্মকাণ্ডের এবারই অবসান হোক। ঘেরগুলো উচ্ছেদ করে রবিশস্যের জন্য জমি প্রস্তুতে কৃষকদের দ্রুত সুযোগ করে দেওয়া হোক।