দ্রুত আবার বৈঠক ডাকা হোক

শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে যে পার্বত্য চুক্তি সই হয়েছিল, তার অন্যতম শর্ত ছিল সেখানকার ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি। কেননা ভূমি বিরোধের কারণেই সেখানে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত, অগ্নিসংযোগ ও জবরদস্তি চলে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে ৭ সেপ্টেম্বর একটি সংগঠনের ডাকা হরতালের হুমকির মুখে আহূত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত করার ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই বছর পর পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন বৈঠক আহ্বান করলে এর প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নামে একটি সংগঠন ওই দিন থেকে ৩২ ঘণ্টার হরতাল ডাকে। এরপরই গত মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ির ভূমি কমিশনের সচিবের সই করা চিঠিতে বৈঠক স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়। এরপর সংগঠনটিও তাদের হরতালের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।

পার্বত্য ভূমি কমিশন সরকার গঠিত একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমিসংক্রান্ত যে বিরোধ আছে, আইন অনুযায়ী সেটি নিষ্পত্তি করার কথা তাদের। যদি নাগরিক পরিষদের নেতারা মনে করেন তাঁদের দাবি যৌক্তিক, তাঁরা কমিশনে গিয়ে সে কথা বললেন না কেন? হরতালের হুমকি দিয়ে সরকারের একটি সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ করে দিলেন কেন?

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার মূলে যে ভূমি বিরোধ, সেটা স্বীকার করেই সরকার ভূমি কমিশন করেছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, একাধিকবার কমিশন গঠিত হলেও তারা কাজ করতে পারেনি অথবা করতে চায়নি। প্রথমে কমিশন আইনেই গলদ ছিল। ২০১৬ সালে আইন পরিবর্তন করে কয়েকটি বৈঠক হলেও এখন পর্যন্ত একটি বিরোধেরও নিষ্পত্তি হয়নি।

দেশের ২৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক ভূমি কমিশনের বৈঠক স্থগিত করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা যৌক্তিক বলে মনে করি। তঁারা বলেছেন, পার্বত্য চুক্তির পর ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন গঠিত হলেও গত ২১ বছরে এ কমিশন একটিও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেনি। তবে ২০১৬ সালে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের সংশোধনের পর ভূমি কমিশনের কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়; যা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতিমধ্যে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে ২৬ হাজারের বেশি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদন জমা পড়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে নানা নামে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল সেখানে চুক্তিবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে। এখন তারা নাগরিক পরিষদের নামে মাঠে নেমেছে। সরকারের দায়িত্ব শান্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। তা না করে কোনো মহলের হুমকির মুখে ভূমি কমিশনের বৈঠক স্থগিত করার ঘোষণা পাহাড়ের মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা দেবে। তাহলে কি সরকারের ভেতরেও কেউ কেউ আছেন, যঁারা চুক্তি বাস্তবায়িত হোক তা চান না? এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধান না করে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।

কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের অন্যায় দাবির প্রতি নতি স্বীকার না করে সরকারের উচিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো। ভূমি কমিশনের স্থগিত ঘোষিত বৈঠকটি দ্রুত আবার ডাকা হোক।