বাণিজ্যিক কার্যক্রমের চুক্তি বাতিল হোক

ঢাকার পর সবচেয়ে বড় শহর চট্টগ্রাম। কিন্তু ঢাকায় অনেকগুলো উদ্যান থাকলেও চট্টগ্রাম শহরে আছে অল্প কিছু। তার মধ্যে একটি হলো বিপ্লব উদ্যান। নামেই উদ্যান সেটি, নগরীর ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় ছোট্ট একচিলতে উঠানের মতো জায়গা। গাছগাছালি নেই বললেই চলে। মূলত বসে আড্ডা দেওয়ার জায়গা এটি। ধারণক্ষমতা অল্প হলেও প্রতিদিন প্রচুর জনসমাগম এ উদ্যানে। কারণ, এর আশপাশে আর কোনো উন্মুক্ত জনপরিসর নেই। যদিও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে উদ্যানটির পরিবেশ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এখন সেখানে আরও বেশি ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

উদ্যান বা পার্ক থাকতে হয় উন্মুক্ত। বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া, হাঁটাচলা ও বসে আড্ডা দেওয়ার আদর্শ স্থানও হতে হয় সেটিকে। একটা সময় বিপ্লব উদ্যানের এমন রূপ থাকলেও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে তা ধ্বংস করা হয়েছে। ২০১৮ সালে সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব পাওয়া দুটি প্রতিষ্ঠান উদ্যানের পূর্ব পাশে দোতলা ভবন নির্মাণ করেছিল। নিচতলায় করা হয় বেশ কটি খাবারের দোকান। ওপরেও খাবারের দোকান করার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় ২০২০ সালে দোতলার স্থাপনা ভেঙে দেয় সিটি করপোরেশন।

এখন আগের দুটি প্রতিষ্ঠানের একটির সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করেছে সিটি করপোরেশন। চুক্তি অনুযায়ী উদ্যানে বিলবোর্ড, মেগা সাইন, এটিএম বুথ, কিয়স্ক, প্রদর্শনী কেন্দ্র, কিডস এক্সপেরিয়েন্স, গেমিং জোন ইত্যাদি স্থাপন করতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি। আয়োজন করা যাবে মেলা বা উৎসবেরও। এসব করার জন্য ভেঙে ফেলা হবে বিদ্যমান গ্লাস টাওয়ার ও পানির ফোয়ারা। দোতলায় আবার স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। সেখানে চট্টগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসংবলিত জাদুঘরসহ প্রদর্শনী কেন্দ্র থাকবে।

ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী, উদ্যানে ৫ শতাংশের বেশি কংক্রিট অবকাঠামো থাকতে পারবে না। আর আন্তর্জাতিকভাবে ২ শতাংশও অনুমোদন করে না। কিন্তু বিপ্লব উদ্যানের কংক্রিট অবকাঠামোর পরিমাণ অন্তত ৫৫ শতাংশ। এখন নতুন চুক্তি অনুযায়ী এসব বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু হলে কংক্রিট অবকাঠামোর পরিমাণ আরও বাড়বে।

পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জনপরিসর ছাড়াই চট্টগ্রাম শহরের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। একচিলতে খোলা জায়গার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এখানে ক্ষীণ হয়ে এসেছে। বরং নানা সময়ে উন্নয়ন ও ঢেলে সাজানোর নামে অন্যান্য উদ্যান বা পার্কের পরিবেশ নষ্ট করেছে সিটি করপোরেশন, যা দেশের পরিবেশ আইনের লঙ্ঘন। আর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে সিটি করপোরেশন এ আইনবিরুদ্ধ কাজ করছে। আমরা চাই বিপ্লব উদ্যানকে ধ্বংসের এ চুক্তি বাতিল করা হোক। বিদ্যমান কংক্রিটের অবকাঠামো অপসারণ করে উদ্যানের সবুজ প্রকৃতিময় পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। উদ্যানকে থাকতে দেওয়া হোক উদ্যানের মতো।