বন্ধ দরজা খুলে জ্ঞানের আলো ছড়ান

সম্পাদকীয়

ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। ভাষাচর্চার মাস। এ মাসে রাজধানী ঢাকা ছাড়িয়ে মফস্‌সল শহরের ছোট্ট পরিসর পর্যন্ত আয়োজিত হয় অমর একুশে বইমেলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জেলা-উপজেলায় এসব আয়োজনে বড় ভূমিকা রাখে স্থানীয় গ্রন্থাগারগুলো।

একসময় এমন চিত্র দেখা গেলেও এখন তা অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায়। সেখানকার একমাত্র সরকারি গ্রন্থাগারটি উপজেলার সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনস্থল হলেও সেখানে এখন যেন অন্ধকার নেমে এসেছে। ১০ বছর ধরে গ্রন্থাগারটি তালাবদ্ধ। বিষয়টি হতাশাজনক।

১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সরাইল উপজেলার এ গণগ্রন্থাগার। একসময় বই ও পত্রিকা পড়া, সাহিত্য-আড্ডা, কবিতাপাঠের আসর, ইতিহাসচর্চা, ছোটখাটো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নজরুল-রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্‌যাপন, বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবনী নিয়ে আলোচনা সভা, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনসহ নানা কর্মকাণ্ড এখানে হতো। কিন্তু এ সবকিছুই এখন স্মৃতি। সরাইলের সাংস্কৃতিক তৎপরতার দিনগুলো হারিয়ে গেছে। যে গ্রন্থাগারকে ঘিরে এ কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালিত হতো, সেখানেই এখন ভুতুড়ে পরিবেশ নেমে এসেছে।

উপজেলা পরিষদ চত্বরে দ্বিতল গণগ্রন্থাগার ভবনটির অবস্থান। ১০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির কোনো পরিচালনা কমিটি নেই। এ কারণে ১০ বছর ধরে এ গ্রন্থাগার তালাবদ্ধ। কয়েক বছর আগে ভবনের নিচতলা সরকারি আরেকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়াও দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর এ ভবনের আশপাশে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। তখন এর আশপাশে চলে মাদক সেবন ও কেনাবেচা। গণগ্রন্থাগারে নেই নতুন বই, নেই পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল।

চার লক্ষাধিক জনসংখ্যার সরাইল উপজেলায় ৪টি কলেজ ও ২৭টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অন্যান্য পড়াশোনা ও সাংস্কৃতিক চর্চায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে গ্রন্থাগারটি। একটা সময় সে কাজই করেছিল এ প্রতিষ্ঠান। এখন স্থানীয় সুধীজন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের আক্ষেপ, সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি উপজেলাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। তাঁদের দাবি, গ্রন্থাগারের হাল ধরার জন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হোক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও গণগ্রন্থাগার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মেসবা উল আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, খোঁজখবর নিয়ে গণগ্রন্থাগারটি সচল করার লক্ষ্যে শিগগিরই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা তাঁর কথায় আশ্বস্ত হতে চাই। গ্রন্থাগারটি আবার সচল করে সেখানকার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।