এলাকাবাসীর জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দিন

সম্পাদকীয়

রাজধানী ঢাকার নাগরিক সুবিধা কতটা সংকুচিত হয়ে এসেছে, তার বড় একটি নমুনা হচ্ছে এ শহর থেকে উন্মুক্ত জনপরিসরগুলো হারিয়ে যাওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ন্যূনতম ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা, খেলার মাঠ, পার্ক ইত্যাদি থাকা উচিত। এ হিসাবে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য সোয়া দুই একর খোলা জায়গা এবং এক একর খেলার মাঠের প্রয়োজন। অপরিকল্পিত নগরায়ণের শহর ঢাকাতে কি এমন জনপরিসর থাকার বাস্তবতা আছে কি?

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩১টি ওয়ার্ড খেলার মাঠ শূন্য। ঢাকার এ অংশেরই ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবশ্যই একটি পার্ক আছে, যার নাম বশিরউদ্দিন সরদার পার্ক। এটি ছাড়া পুরান ঢাকার ওই ওয়ার্ডের আর কোনো পার্ক বা খেলার মাঠ নেই। ওয়ার্ডটিতে অন্তত আড়াই লাখ মানুষের বসবাস, অথচ আছে একটি পার্ক, তা-ও মাত্র পাঁচ কাঠা আয়তনের। ডব্লিউএইচওর শর্ত কোনোভাবেই এতে পূরণ হয় না।

আরও দুঃখজনক হচ্ছে, পার্কটি এখন আর কার্যত আর পার্ক নেই। সেখানে ঢোকার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের টাকা দিতে হয়। অথচ প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে এ পার্কের উন্নয়ন করা হয়। সেখানে এলাকার শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার জায়গাও রাখা হয়। কিন্তু খোলা জনপরিসরটিতে এখন আর সময় কাটানোর কোনো সুযোগ নেই এলাকাবাসীর। কারণ, এ পার্কের ভেতরে রাইড বসিয়ে চলছে ব্যবসা। আর সে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা। সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়েই একপ্রকার পার্কটি দখল করে সেখানে রাইড ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। রাইডে প্রতিদিন পাঁচ-ছয় ঘণ্টা উচ্চ স্বরে গান বাজানোর কারণে এলাকাবাসী আরও বেশি অতিষ্ঠ।

পার্কটি সংস্কারের সময় একটি গণশৌচাগার ও চারতলা একটি কফিশপ তৈরি করা হয়। গণশৌচাগার ও কফিশপ পরিচালনার জন্য তারা ইজারা দিয়েছে। রাইড বসানোর জন্য কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। তবে সেই কফিশপের জায়গাটি হয়ে গেছে খাবারের হোটেল। গণশৌচাগারটিও বন্ধ রেখেছেন ইজারাদার।

আগেও দেখা গেছে, কোনো পার্ক উন্নয়ন করতে গিয়ে যখন কংক্রিটের পরিমাণ বেড়ে যায়, সেই পার্ক কার্যত তার চরিত্র হারায়। সরদার পার্কেও গণশৌচাগার ছাড়া চারতলা একটি ভবনের প্রয়োজন ছিল না। সেটির কারণে সেখানে রাইড ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে নিয়েছেন ইজারাদার ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

পুরান ঢাকার এ পার্ক থেকে খাবার হোটেল ও রাইড ব্যবসা দ্রুত উচ্ছেদ করুন। জনপরিসরটি এলাকাবাসীর জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।