জগতি স্টেশনের নতুন প্রাণসঞ্চার করুন

যুক্তরাজ্যের অফিস অব রেল অ্যান্ড রোড ‘হেরিটেজ রেলওয়ের’ একটা সংজ্ঞা দিয়েছে। হেরিটেজ রেলওয়ের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে থাকে। স্টেশনটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সাবেকি আমলের রেলওয়ে কার্যক্রমের অনুকরণ করা হয়। এসব দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। কোথাও কোথাও নতুন করে পুরোনো আমলের আদলে রেলগাড়ি থাকে। সেগুলো অল্প দূরত্বে চলাচলও করে। যুক্তরাজ্য তো বটেই, বিশ্বের নানা দেশে এ ধরনের রেল চলাচলের ব্যবস্থা আছে। 

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দেশের শিশুরা সৃজনশীল কাজের অংশ হিসেবেও নিয়মিত রেলওয়ে জাদুঘরে যায়। আমাদের পাশের দেশ ভারতও সম্প্রতি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। প্রয়াগরাজে (এলাহাবাদ) ১৮৫৫ সালে ব্রিটিশরা যে রেলপথ স্থাপন করেছিল, তা পুরোদমে চালু হয় ১৮৫৯ সালে। তাদের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দেড় শ বছরের পুরোনো এই রেলওয়ে স্টেশনটিকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজের সুপারিশে পুরোনো ভবনগুলোকে সংস্কার করে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। অন্যতম প্রাচীন আরেকটি স্টেশন জম্মু কাশ্মীরের বিক্রম চক। এটিকেও দর্শনীয় স্থানে পরিণত করার কথা। 

কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশনও একসময় ব্যস্ত জংশন ছিল। কুষ্টিয়ায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, ১৬১ বছরের পুরোনো এই স্টেশন এখন কোনোরকমে টিকে আছে। দালানের লাল ইটের রং ফিকে হয়ে এসেছে, টেলিফোনগুলো অকেজো। বসার জায়গা নেই; বাতি, পানি, শৌচাগারও নেই। সন্ধ্যার পর পরিত্যক্ত ভবনে নানা ধরনের মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। ওই সব স্থাপনায় মাদক সেবনের অভিযোগও আছে। সব ট্রেন এখানে আর থামে না। অথচ এই স্টেশনে স্টাফ কোয়ার্টার ছিল। এখানে সব সময় ১৩ জন ১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকতেন। এই স্টেশনে প্রচুর মাল ওঠানো-নামানো হতো। পান থেকে শুরু করে ধান, সার ইত্যাদি ট্রেনে আসত। মাত্র ১২ আনা দিয়ে রাজবাড়ীর পাংশায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যেতেন এক ব্যক্তি। 

চাইলেই কিন্তু কালের সাক্ষী জগতি স্টেশনে নতুন প্রাণের সঞ্চার করা যায়। এখানে একটি রেল জাদুঘর হতে পারে। পাশাপাশি আধুনিকায়ন করে জগতি স্টেশনকে আগের কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে দেওয়া যায়। যেসব পর্যটক কুষ্টিয়া যান, তাঁরা দর্শনীয় নানা জায়গার সঙ্গে জগতিও বেড়িয়ে আসতে পারেন। বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পের বিকাশ আর হলো কই? আশপাশের দেশের দিকে তাকিয়েও আমরা আমাদের পর্যটনস্থানের তালিকায় নতুন নতুন স্থান যুক্ত করতে পারি। তা ছাড়া বিগত এক দশকে বাংলাদেশ রেলওয়ে দেশের নানা জায়গায় রেলস্টেশনকেন্দ্রিক অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। যেটাকে তারা বলছে আধুনিকায়ন। 

জগতির মতো প্রাচীন স্টেশনগুলো, যাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে, সেগুলোর বেলায় তারা কী ভাবছে জানা যায় না। আমরা আশা করব, দ্রুত জগতি রেলওয়ে স্টেশনের ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্যবস্থা নেবে।