বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক

গত সাড়ে পাঁচ মাসে ঢাকা ও গাজীপুরেই ৬৮টি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া নিশ্চয় উদ্বেগের খবর। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও গাজীপুরে ৬৮টি শিল্পকারখানা বন্ধ আছে। এর মধ্যে ৫৮টি স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী ভিত্তিতে বন্ধ। এর বাইরে ছয়টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কেয়া গ্রুপ। কেয়া গ্রুপের নোটিশে বলা হয়, বর্তমান বাজারের অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা ও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতার জন্য তাদের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ আন্দোলনে কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব কারখানায় কাজ করতেন অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক।

কারখানা বন্ধ হওয়ার পেছনে যেমন রাজনৈতিক কারণ আছে, তেমনি আছে প্রতিযোগিতায় টিকে না থাকতে পারাও। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, খেলাপি ঋণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় অনেক কারখানামালিক খেলাপি হয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেক মালিক আত্মগোপনে থাকায় কারখানা রুগ্‌ণ হয়ে পড়ে। 

বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকেরা কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। এর ফলে প্রায়ই বন্ধ থাকছে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ জানায়, গাজীপুরের পোশাক কারখানার মধ্যে ৩৫টি এখনো গত নভেম্বরের বেতন দিতে পারেনি। ডিসেম্বরের বেতন এখনো দেয়নি ৪৫ শতাংশ পোশাক কারখানা। বর্তমানে ৫ শতাংশ পোশাক কারখানায় শ্রম অসন্তোষ চলছে। ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি) নিয়ে জটিলতা চলছে ৯ শতাংশ পোশাক কারখানায়। 

বুধবার শ্রমিকদের বিক্ষোভের এক পর্যায়ে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। একটি মালভর্তি ট্রাক ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তিন সংবাদকর্মী আহত হন। বেক্সিমকোর কারখানা লে-অফের আগে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনাবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে আরও দুই মাস জনতা ব্যাংক থেকে ঋণসহায়তা দেওয়া হবে। 

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) এস এম আবদুল লতিফ জানান, ‘শ্রমিকেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কারখানার লে–অফ তুলে নিতে আমরা সরকারের সহযোগিতা চাইছি।’ কারখানা বন্ধ থাকলে বা পুড়িয়ে দেওয়া হলে মালিকদের চেয়ে শ্রমিকেরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফলে কারখানা বন্ধ রেখে সমাধানের পথ খোঁজা ঠিক হবে বলে মনে হয় না। যেসব মালিক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নিক। একই সঙ্গে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা–ও সরকারকে করতে হবে। 

অনেক কারখানায় দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি আছে। সরকার শিল্পকারখানা অধিদপ্তরের মাধ্যমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকের চাহিদা আছে, এমন কারখানায় তাঁদের কাজের ব্যবস্থা করতে পারে। প্রয়োজনে তারা তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহায়তাও নিতে পারে।

গত সাড়ে পাঁচ মাসে যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, তার বেশির ভাগই তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী। এসব কারখানার কার্যাদেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রপ্তানিতে গুরুতর প্রভাব পড়বে। সরকারের প্রধান কর্তব্য হবে অবিলম্বে বন্ধ কারখানাগুলো চালু করা, যাতে বেকার শ্রমিকেরা কাজ ফিরে পান। আর যেসব কারখানা চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, সেখানকার শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত শ্রমিক অসন্তোষ যেকোনো সময় মারাত্মক রূপ নিতে পারে।