স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় হতে হবে

সম্পাদকীয়

সুন্দরবনে একসময় বনদস্যুর আতঙ্ক ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করাও হয়। বনজীবী মানুষের মধ্যেও নিরাপত্তা নিয়ে স্বস্তি নেমে এসেছিল। কিন্তু সম্প্রতি খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলায় আবারও বনদস্যুদের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সেখানে বনদস্যুদের নতুন একটি বাহিনী গড়ে উঠেছে। ধারালো অস্ত্র ও বন্দুক নিয়ে বনজীবীদের ওপর হামলা করছে তারা। ফলে জীবিকা নির্বাহ নিয়ে বনজীবী মানুষেরা শঙ্কায় আছেন।

আমাদের দেশে টেকসই পদক্ষেপের বরাবরের মতোই অভাব। কোনো একটা পদক্ষেপে সফলতা এলেই প্রশংসার জোয়ারে ভেসে সেটি সেখানেই শেষ। তদারকির মাধ্যমে সেই সফলতা ধরে রাখার প্রবণতা কম। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যেমন অভিযোগ ছিল, আবার দস্যুদের আত্মসমর্পণের সুযোগ করে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা ও পুনর্বাসনের পদক্ষেপ ছিল বেশ প্রশংসিত।

দুঃখজনক হচ্ছে, নজরদারি ও তদারকির অভাবে সুন্দরবনে আবারও দস্যুদের উৎপাত বেড়ে গেছে। খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার বনজীবী জেলেরা জানাচ্ছেন ডাকাতদের মুখ থেকে বেঁচে ফিরে আসার ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতা।

বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করতে গিয়ে গহিন বনে যাওয়া জেলেদের কাছ থেকে মাছ, টাকা, মুঠোফোন সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে ডাকাতেরা। এমনকি বনে ঢুকলে জেলেদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের চাঁদাও দাবি করছে দস্যুরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ‘সুন্দরবন বাহিনী’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা দস্যুর দলটি রামদা, বন্দুক, লাঠি নিয়ে হামলা চালাচ্ছে।

বনজীবীদের ভাষ্য, ডাকাত দলটি এক মাস ধরে সুন্দরবনের গেওয়াখালী, আলকি, নিশিনখালী এই এলাকা দিয়ে লুটতরাজ করে চলেছে। ১০–১২ জনের এই দস্যু বাহিনীর অধিকাংশ সদস্যের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায়।

বন বিভাগের নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন, সুন্দরবনের হংসরাজ নদের আশপাশের এলাকায় একটি ডাকাত দল খুব বিরক্ত করছে। অভিযান চালিয়ে তাদের একটি নৌকা জব্দ করা হলেও কাউকে আটক করা যায়নি। বন বিভাগের বক্তব্য, প্রতিটি ফাঁড়িতে এই ডাকাত দলের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত আরও জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আমরা তাঁদের বক্তব্যে আস্থা রাখতে চাই। বনদস্যুর দলটিকে আটক করে আইনের মুখোমুখি করা হোক। দস্যুমুক্ত সুন্দরবনে কেন আবার ডাকাতের উৎপাত বেড়েছে, তার কারণ অনুসন্ধানও জরুরি। এ ব্যাপারে আমরা জেলা–উপজেলার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মনোযোগ আকর্ষণ করছি।