নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বিসিএসের মাধ্যমে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক চাকরিপ্রার্থী হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, এতে একেকটি বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ সংকুচিত হবে।

যদিও পিএসসির চেয়ারম্যান নতুন নিয়মের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, একটি বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে বেশি প্রার্থী, আরেকটিতে কম প্রার্থী নিয়োগ পাচ্ছেন; এমন ভারসাম্যহীনতা দূর করতেই নতুন নিয়ম চালু করা হচ্ছে।

নতুন নিয়মে সর্বশেষ চার বিসিএসের কোনটিতে কত নন-ক্যাডার পদ বরাদ্দ থাকবে, তা আগেই নির্দিষ্ট থাকবে। ৪০তম বিসিএস থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গত ২৩ আগস্ট চিঠি দিয়েছে পিএসসি। চিঠির তথ্য অনুযায়ী, পিএসসিতে এখন নবম, দশম ও এগারোতম গ্রেডে নিয়োগের জন্য মোট ১ হাজার ২০৭টি শূন্য পদের তালিকা জমা পড়েছে।

পিএসসির বরাত দিয়ে প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, গত কয়েকটি বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ক্যাডার পদে নিয়োগের পর উত্তীর্ণ বাকি প্রার্থীদের নন-ক্যাডার হিসেবে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হচ্ছিল।

এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শূন্য পদের সংখ্যা পিএসসিতে পাঠানোর অনুরোধ করত। পরে মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হতো। বিসিএসের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে।

তবে চলমান ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের ক্ষেত্রে কোন বিসিএসের সময় কোন শূন্য পদের চাহিদা এসেছে, তা পর্যালোচনা করে মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে ২৯তম বিসিএস থেকে নিয়োগ দিয়ে আসছে পিএসসি। গত পাঁচটি বিসিএসের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, ব্যতিক্রম ছাড়া তালিকার অর্ধেকের কম প্রার্থী নিয়োগ পেয়ে থাকেন। এ অবস্থায় নন-ক্যাডার পদে প্রতিটি বিসিএসের জন্য পদসংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিলে চাকরিপ্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন। 

তবে বিসিএস কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনা। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ৩৩তম থেকে ৩৮তম বিসিএসে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ৬৩১ জন চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন রাজনৈতিক কারণে।

পুলিশি যাচাইকরণের নামে তাঁদের নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়েছে। আগে পুলিশের বিশেষ শাখা এ প্রতিবেদন দিত। এখন একাধিক সরকারি সংস্থার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকেও ‘ছাড়পত্র’ নেওয়া হয়। এ নিয়ে উৎকোচ লেনদেনেরও অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘ঔপনিবেশিক সরকার এ দেশের মানুষকে অবিশ্বাস করত বলেই এ ধরনের আইন চালু করেছিল।

স্বাধীন দেশে এ আইনের যৌক্তিকতা দেখি না। কারও নামে ফৌজদারি মামলা আছে কি না, সেটাই পুলিশি যাচাইকরণের নামে দেখা যেতে পারে। অন্য কিছু নয়।’

পিএসসির সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের রাজনৈতিক বিবেচনায় চাকরি থেকে বঞ্চিত করা কেবল মেধাবীদের দেশসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা নয়, সংবিধান ও মানবাধিকারের দৃষ্টিতেও এটি বেআইনি। এ বিষয়ে পিএসসিরও কিছু করণীয় আছে।