নদীটি অতিসত্বর খনন করা হোক 

নদী কখন মরে যায়? দখল–দূষণে তো অবশ্যই। কিন্তু সেই দখল–দূষণ কেন হয়? নদীর উৎসমুখ যখন বন্ধ হয়ে যায়, নদী যখন কয়েক ভাগে ভাগ হয় যায়। এর জন্য অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণই বড় দায়ী। এর ফলে নদী তার অস্তিত্ব হারায়, পরিণত হয় খণ্ডিত খাল কিংবা সরু নালায়। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি খুলনার একসময়কার স্রোতস্বিনী শোলমারী নদীর ক্ষেত্রে। অতীতে এ নদীতে বড় বড় নৌকা ও কার্গো চলাচল করলেও এখন আর কোনো নৌযান দেখা যায় না। হেঁটেই নদীর এক পার থেকে অন্য পারে যায় মানুষ। নদীটির এমন বেহালে জনজীবনে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, পরিবেশের ওপরে তো অবশ্যই। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ শোলমারী নদী খুলনার বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া উপজেলার ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে। কিন্তু নানা বাঁকে পলি জমতে জমতে বাঁকের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে নদীটির। এতে চর খনন করে আরেক দিকে পানির প্রবাহের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হলেও শোলমারী প্রাণ ফিরে পায়নি। বরং অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে মরতে বসেছে নদীটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, নদীতে মাছ নেই। নৌকাও চলে না। নদীর সঙ্গে সঙ্গে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।

২০০০ সালের দিকে শোলমারী খেয়াঘাটসংলগ্ন এলাকায় একটি ১০ কপাটের জলকপাট (স্লুইসগেট) নির্মাণ করায় দুই অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে নদী। আর চর পড়ে যাওয়া নদীর জায়গায় মাছের ঘের, ইটভাটা এসব গড়ে উঠতে থাকে। ফলে দখল হয়ে গেছে নদীর বিপুল জমি। গত দুই বছরে ১০ কপাটের জলকপাটের কপাটগুলোও পলি জমে পুরো বন্ধ হয়ে গেছে। জলকপাটের মুখ থেকে পলি অপসারণ করা হলে আবারও তা বন্ধ হয়ে গেছে। 

বটিয়াঘাটার কৃষির জন্য শোলমারী নদীর গুরুত্ব অনেক বেশি। সেচ এবং পানিনিষ্কাশন—দুই ক্ষেত্রেই নদীর দরকার। শোলমারী নদীর যে অবস্থা হয়েছে, তাতে শিগগিরই কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া ও খুলনা শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘শোলমারীতে জোয়ার দুই দিক দিয়ে ঢোকে, এ জন্য এখানে পলি জমার হারটা বেশি। শোলমারী নদী নিয়ে একটা স্টাডি চলমান রয়েছে। সেটা শেষ হলে নদী ভরাট কীভাবে বন্ধ করা যায়, সে বিষয়টি জানা যাবে।’ 

একটি নদী মরে গেলে মৃত্যু হয় একটি জনপদেরও। নদীটির দখল–দূষণ রুখতে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ চাই। নদীটি অতিসত্বর খনন করা হোক। এখানে আর কোনো অপরিকল্পিত উন্নয়ন আমরা চাই না।