মাটি কাটছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

দেশে ফসলি জমি কমে আসছে। সেটি হওয়া মানে খাদ্যের উৎপাদনও কমে যাওয়া। আমরা দিন দিন আমদানিনির্ভর দেশ হয়ে উঠছি। দুর্যোগ–মহামারিতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমরা দেখেছি।

যে কারণে সরকার থেকে বারবার বলা হয়, কোনো আবাদি জমি যাতে পতিত না থাকে। এখন সেই ফসলি জমির মাটিই যদি কেটে নেওয়া হয়, তাহলে চাষবাস বা খাদ্য উৎপাদন হবে কী করে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বানাইল ইউনিয়নে সেটিই ঘটছে।

ফসলের জমির জন্য এর উপরিভাগের মাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেটিকে বলা হয় ‘টপ সয়েল’। এই টপ সয়েল কেটে নেওয়া হলে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে মাটি স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসতে ২৫–৩০ বছর সময় লেগে যায়। নানা সময়ে কৃষকেরা বিপদে বা প্রলোভনে পড়ে এই টপ সয়েল বিক্রি করতে বাধ্য হন।

জমি চাষ ও ফসল উৎপাদনের জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা না করে নগদ টাকা পাওয়ার বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু সেখানেই ঘটে কৃষি ও কৃষক—উভয়েরই সর্বনাশ। এই সর্বনাশা কাজের বিরুদ্ধে বানাইল ইউনিয়নের নরদানা গ্রামের কিছু সচেতন মানুষ প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু মাটি ব্যবসায়ীদের লোকজন তাঁদের মারধর করার পর বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন।

এরপরও মাটি ব্যবসায়ীরা মাটি পরিবহনের জন্য সেখানে একটি খালে বাঁধও দিয়ে দেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রায় ৪০ ফুট প্রশস্তের ওই খাল ২০০ বছরের বেশি পুরোনো। প্রায় ৪০ বছর আগে খালটি খনন করা হয়েছিল। খালটির কারণে পার্শ্ববর্তী পাটুলি, বানাইল, বাংগল্যা, কালা ভাতগ্রাম ও টেগুরী এলাকার জমিতে ফসল হয়। ফলে এ খালে বাঁধ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রথম আলোতে গত রোববার প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর খালটির ওপরের বাঁধটি অপসারণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

বানাইল ইউনিয়নে মাটি ব্যবসায়ীদের তৎপরতা এখনো বন্ধ হয়নি। নরদানা গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতেও চলে মাটির অবৈধ ব্যবসা। সেসব মাটি পরিবহন করা ট্রাক্টর নরদানাসহ অন্যান্য লোকালয়ের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। ভারী পরিবহন চলাচল করায় গ্রামের রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

রাতের আঁধারে এ মাটি পরিবহন হওয়ায় মানুষের শান্তিও নষ্ট হচ্ছে সেখানে। নরদানা গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক এক সদস্যের নেতৃত্বে কিছু প্রভাবশালী লোক অবৈধভাবে এ মাটির ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ায় তাঁরা এখন আরও ক্ষুব্ধ। ফলে প্রতিবাদ জানানো লোকদের ওপর তাঁরা ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছেন।

প্রশাসন খালের বাঁধটি কেটে দিয়েছে; কিন্তু অবৈধভাবে মাটি কাটার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। মাটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের আইন আছে। আমরা সেই আইনের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।