সিটি করপোরেশনের বাইরে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে দেশের নানা জেলা–উপজেলায় গঠিত হয় পৌরসভা। কিন্তু সেসব পৌরসভা নাগরিক সেবা কতটা নিশ্চিত করতে পারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সিটি করপোরেশনগুলো নানা সময়ে আলোচনা ও সমালোচনায় থাকলেও অনেকটা আড়ালেই থেকে যায় পৌরসভাগুলো।

রাজশাহীর বাঘা হচ্ছে তেমনই একটি পৌরসভা। প্রায় দুই যুগ আগে এই পৌরসভা গঠিত হয়। এই সময়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থী পাল্টাপাল্টি করে হয়েছেন পৌর মেয়র। কিন্তু তাঁদের কেউ নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেননি। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৯৯ সালে বাঘা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তিনবার পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবার বিএনপির প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক, দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগের প্রার্থী আক্কাছ আলী, তৃতীয়বার আবারও আবদুর রাজ্জাক পৌর মেয়র হন। চলতি বছরের শেষের দিকে আবার নতুন নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। মেয়র আবদুর রাজ্জাক পানি সরবরাহের প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন। ৭২ লাখ টাকা খরচ করে মাটি খুঁড়ে পাইপ বসানো হয়। কিন্তু নগরবাসী পানি সুবিধা পাননি। এরপর আক্কাছ আলীর মেয়াদে ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ ও নতুনভাবে পাইপলাইন বসানোর বড় প্রকল্প নেওয়া হয়।

যেটি বর্তমান মেয়র আবদুর রাজ্জাকের মেয়াদেও চলছে। প্রায় ৩২ কিলোমিটার পাইপ বসানো হবে, তার মধ্যে ১০০ মিটার পাইপ প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনটি এলাকায় পানি উৎপাদন নলকূপ বসানো হয়েছে। সব মিলে এ প্রকল্পে প্রায় ২৫ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। যদিও পুরো প্রকল্পটি কখন শেষ হবে বা আদৌ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে নগরবাসীর মধ্যে।

বাঘার বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘পানি সরবরাহের প্রকল্প করতে করতেই ২৩ বছর পার হয়ে গেল। পৌরবাসী এক ফোঁটা পানিও পায়নি। নির্বাচনের পর আবার কী হবে, কে জানে।’

এদিকে পৌরসভায় পানি সরবরাহব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় পরস্পরকে দুষছেন আবদুর রাজ্জাক ও আক্কাছ আলী। একজনের মেয়াদে নেওয়া প্রকল্প আরেকজন নষ্ট করেছেন বা বাস্তবায়িত হতে দেননি, এমনটিই মনোভাব তাঁদের। কিন্তু এদিকে যে নগরবাসী একটি অপরিহার্য নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত, সেটি যেন তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে আছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয় ও উর্ধ্বতন মহলের কাছে জানতে চাই, বাঘাবাসী আর কতকাল এভাবে অবহেলিত থাকবে। দ্রুত প্রকল্পটি শেষ করে সেখানে পানি সরববরাহ নিশ্চিত করা হোক।