বিপুল টাকার প্রকল্পটি কেন ব্যর্থ হলো

সম্পাদকীয়

বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নীতির ফলে দেশের কৃষিব্যবস্থায় নানা পরিবর্তন এসেছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রাযুক্তিক সুবিধা কৃষকদের জন্য সহজলভ্য করা হয়েছে। ফলে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের কৃষি ও কৃষকেরা।

কিন্তু একটি জায়গায় বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেলেও আমাদের কৃষিব্যবস্থা তার চেয়ে অনেক গুণ পিছিয়ে আছে। সেটি হচ্ছে কৃষকদের কাছে কৃষি আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য ও পূর্বাভাস পৌঁছে দেওয়া। সরকার যে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়নি তা নয়, কিন্তু যারা সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করবে, তাদের গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সেটি অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়, যার নমুনা আমরা দেখতে পাই যশোরের ৭৭টি ইউনিয়নে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কৃষকদের কৃষি আবহাওয়াবিষয়ক নির্ভরযোগ্য তথ্য ও পূর্বাভাস জানাতে যশোর জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছিল তথ্য বোর্ড, স্বয়ংক্রিয় বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র বা রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকতে থাকতে সেসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, যাঁদের সুবিধার জন্য সেসব বসানো হয়েছিল, সেই কৃষকেরাই এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানেন না।

এখন কালবৈশাখীর মৌসুমে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ধানখেত নিয়ে আতঙ্কে থাকেন কৃষকেরা। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছেন। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধুপখালী গ্রামের একজন ‍কৃষকের বক্তব্য, ‘ফসলের জন্য আবহাওয়ার নির্ভরযোগ্য তথ্য ও পূর্বাভাস জানা জরুরি। অনেক সময় কোনো পূর্বাভাস না পাওয়ায় ঝড়-বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়। ইউনিয়ন পরিষদে আবহাওয়ার নির্ভরযোগ্য হালনাগাদ তথ্য ও পূর্বাভাস জানানোর ব্যবস্থা আছে, আগে কখনো শুনিনি।’

২০১৭ সালে এক প্রকল্পের আওতায় দেশের ৪৮৭টি উপজেলা ও সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে এ ধরনের যন্ত্রপাতি বসানো ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য পাঠানোর জন্য সরবরাহ করা হয়েছিল ইন্টারনেটের সংযোগসহ ৬ হাজার ৬৬৪টি ট্যাব। প্রকল্পটির পেছনে মোট বরাদ্দ করা হয়েছিল ২১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কৃষকের কল্যাণে এত অর্থ খরচ করা হলো, তার সুফল তাঁরা কেমন পাচ্ছেন, সেই চিত্রই আমরা দেখলাম যশোরে।

বিপুল টাকার যন্ত্রপাতি কেনাকাটা হলো, প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও আর্থিক সুবিধা পেলেন—এরপরই কি প্রকল্পটির মৃত্যু হতে হবে? জনগণের বিপুল অর্থের এ অপচয়ে কারও কোনো জবাবদিহি থাকবে না?

কৃষি খাতে সরকারের ভর্তুকি পেয়ে কৃষক উপকৃত হচ্ছেন ঠিকই, আবার এমন প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে তাঁদের। দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলায় এ প্রকল্পের কী হাল, সেটি অনুসন্ধান করে দেখা হোক। সেই সঙ্গে প্রকল্পটির সুফল কৃষকেরা যাতে পান, সেটি গুরুত্বের সঙ্গে নিশ্চিত করা হোক।