‘ওপরের নির্দেশ’ আসলে কতটা ‘ওপরের’

সম্পাদকীয়

‘ওপরের নির্দেশ’ নামের বস্তুটি দৃশ্যত নিরাকার; কিন্তু কার্যক্ষেত্রে যারপরনাই সক্রিয় ও কোরামিন ইনজেকশনের মতো কার্যকর। অনেক সময় ওপরের নির্দেশে অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করার কিংবা কাউকে আটক করার কথা শোনা যায়। সাধারণত খোলাখুলিভাবে ওপরের নির্দেশে সরকারি সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা হরহামেশা ঘটে না। তবে এই ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়।

প্রথম আলোর সংবাদ বলছে, পাকুন্দিয়া বাজারের পাশ দিয়ে দুই কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছিল। তবে কাজটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভাষ্যানুযায়ী, ‘ওপরের নির্দেশে’ তাদের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। আর ‘ওপর’ থেকে নেমে আসা এই ‘নির্দেশ’ তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ।

সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বলেছেন, পাকুন্দিয়া মহিলা কলেজের পেছনের সড়কে বালু ফেলার কাজ চলাকালে তোফায়েলসহ ছাত্রলীগের চার থেকে পাঁচজন গিয়ে জানিয়ে আসেন, ওপরের নির্দেশে কাজ বন্ধ থাকবে। নির্দেশ অমান্য করলে বালু বহনকারী সংশ্লিষ্ট যাবতীয় যান জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। তাঁদের সেই মৌখিক আদেশকে ভীতি প্রদর্শন হিসেবে নিয়ে এবং যথার্থ মাত্রায় ভয় পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে মৌখিকভাবে জানালেও ওপর থেকে কোনো ফয়সালা না হওয়ায় এখন পর্যন্ত (গতকাল দুপুর) কাজ শুরু করা যায়নি।

ঠিকাদারের কাছে ওপরের নির্দেশের ভীতিকর উপস্থাপনার কথা তোফায়েল আহমেদ আগাগোড়া অস্বীকার করলেও বাস্তবতা হলো, কাজ বর্তমানে বন্ধ আছে। যদি একবার ভারী বর্ষণ হয়, তাহলে কাজ জুন মাসের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা যাবে কি না, এ নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, ছাত্রলীগের আলোচ্য নেতারা ওপরের নির্দেশে কাজ বন্ধ করতে বললেও তাঁরা কোনো চাঁদা বা অর্থকড়ি দাবি করেননি বলে ঠিকাদার নিশ্চিত করেছেন। এতে জনমনে ধারণা হতে পারে, নির্দেশটি সত্যিকার অর্থেই ওপরের এবং ঠিকাদারি কাজ থেকে যে প্রচলিত অন্যায্য উপায়ে অর্থ আহরণ করা হয়ে থাকে, এ ক্ষেত্রেও তা-ই হবে এবং সেই অঙ্ক-নির্ধারণবিষয়ক সিদ্ধান্তটি ওপর থেকেই পতিত হবে।

সরকারের দিক থেকে অবিরল ধারার মতো দুর্নীতিতে শূন্য সহনশীলতার যে বাণী বর্ষিত হচ্ছে, তার সঙ্গে এই ওপরের নির্দেশবিষয়ক আখ্যানটি যথেষ্ট সাংঘর্ষিক। যেহেতু সদিচ্ছার বাস্তব রূপায়ণের মূল্যায়ন জরুরি, সেহেতু কাল হরণ না করে এ ধরনের ওপরের নির্দেশের প্রকৃত ‘দাতা’ ও তাঁর সহচরদের প্রকাশ্য বিচার জনসমক্ষে দৃশ্যমান হওয়াও বিধেয়।