ভুক্তভোগী কৃষকের পাশে দাঁড়ান

সম্পাদকীয়

দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারদের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ঠিক সময়ে কাজ শুরু ও শেষ না করা, কাজের মাঝখানে পালিয়ে যাওয়া, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা, নদী–খালের ক্ষতি করাসহ অভিযোগের শেষ নেই। গতানুগতিক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি না থাকায় অনেক ঠিকাদার এমন স্বেচ্ছাচারী আচরণ করে আসছেন। তবে খুলনার কয়রায় একটি বাঁধের প্রকল্পে ঠিকাদার কৃষকদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

কয়রা উপজেলার দক্ষিণ‍ বেদকাশি ইউনিয়নের হারেজখালী এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২ হাজার ৮১১ মিটার বাঁধটির নির্মাণের জন্য ১১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সেখানে চিংড়ি চাষের কথা বলে কৃষকদের কাছ থেকে ফসলি জমি ইজারা নেন ঠিকাদার।

কিন্তু দেখা গেল, সেসব জমি থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে তা ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁধ নির্মাণের কাজে। একে তো ফসলি জমির ক্ষতি করা হচ্ছে, অন্যদিকে জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এর জন্য কৃষককে কোনো অর্থও দিচ্ছেন না ঠিকাদার। জমি ইজারা নেওয়ার নামে মুফতে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে সেখানে।

মেসার্স মোজাফফর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁধ নির্মাণের কাজটি বাস্তবায়ন করছে। সাব-ঠিকাদার হিসেবে ইসরাফিল হোসেন এলাকায় কাজটি করছেন বলে জানা গেছে। আইন অনুযায়ী ফসলি জমির মাটি কাটার কোনো সুযোগ নেই। ঠিকাদার এখানে সেই আইন ভঙ্গ করছেন।

অপরিকল্পিতভাবে বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া মূল বাঁধের স্থান থেকে আরও দূরে নতুন বাঁধ নির্মাণ করায় অনেক ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি এর বাইরে থেকে যাচ্ছে। এখন বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসে সেসব জমি ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, বাঁধটি সোজাসুজি না করে ঘুরিয়ে করায় দৈর্ঘ্য বেড়ে প্রায় তিন কিলোমিটার হয়েছে।

ফলে ব্যয়ও বেড়েছে। বিষয়টি পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারকে তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। কয়েক শ বিঘা ফসলি জমি বাঁধের বাইরে রেখে ফায়দা নিচ্ছেন ঠিকাদার। কম টাকায় তাঁরা ওই জমি ইজারা নিয়ে চিংড়ি চাষের কথা বলে মাটি কেটে নিচ্ছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা কয়রা। অতীতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় এখানে বাঁধের জন্য আহাজারি আমরা দেখেছি। এখনো অনেক জায়গায় টেকসই বাঁধ হয়নি। হারেজখালীতে যেভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে, তা কোনোভাবে কাম্য নয়। আর কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়নেরও কোনো মানে হতে পারে না। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।