বসবাসের পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনুন

ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন এ সরকারের বড় একটি সাফল্য বলা যায়। এর মাধ্যমে লাখো পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। বিশেষ করে নদীভাঙনের শিকার মানুষের জন্য এ প্রকল্প যেন আশীর্বাদস্বরূপ। তবে কোনো কোনো আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকার অসুবিধার বিষয়টিও উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমে। সরকার একদিকে ভূমিহীন মানুষের জন্য নতুন আশ্রয়ণ প্রকল্প করছে, অন্যদিকে আগের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো হয়ে পড়ছে বসবাসের অনুপযোগী। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের মির্জাপুর নিন্দাপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে। সেখানকার ঘরগুলোতে বসবাসের কোনো পরিবেশ নেই। কষ্টের শেষ নেই সেখানকার বাসিন্দাদের।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারি অর্থায়নে সিংজুরী ইউনিয়নের মির্জাপুর নিন্দাপাড়া এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর পাশে দুই একর জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পে টিনের তৈরি পাঁচটি ব্যারাক রয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে ১০টি ছোট কক্ষ রয়েছে। একেকটি ভূমিহীন পরিবারকে একেকটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এখন একটি পরিবারের কীভাবে একটি কক্ষে বসবাস করা সম্ভব? নিরুপায় হয়ে সেটিই করতে বাধ্য হচ্ছিলেন এত দিন, এখন তা–ও করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, ঘরগুলো এতই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে, যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। বৃষ্টির পানি ও কুয়াশা থেকে বাঁচতে পলিথিন টানিয়ে রাখতে হয়। ব্যারাকের নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। শৌচাগারগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বলা যায়, বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেই আছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানান, যাওয়ার জায়গা নেই বলে এসব ঘরে বসবাস করতে হচ্ছে বেশির ভাগ পরিবারকে। সবাই দিনমজুর হওয়ায় অর্থের অভাবে কক্ষগুলো মেরামতও করতে পারছেন না। এর মধ্যে অনেকগুলো কক্ষের বসবাসকারীরা অন্যত্র চলেও গেছেন।

এমন পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে। শুধু ঘর উপহার দিয়ে দায়িত্ব শেষ মনে করার কারণেই কি পরিবারগুলো অসহায় পরিস্থিতিতে পড়ল না? বোঝা যাচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেখানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই সুবিধাভোগীরা দরিদ্রই থেকে গেছে। নিজেদের ঘর মেরামত করার সামর্থ্যও তাদের নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমান জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা ও ঘরগুলোর মালিক বাসিন্দারাই। তাঁদেরই ঘর মেরামত করার কথা। এরপরও এ বিষয়ে সরকারি অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে ঘরগুলো মেরামত করার আশ্বাস দেন তিনি। আমরা আশা করছি, শিগগিরই স্থানীয় প্রশাসন অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াবে এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে বসবাসের পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে।