প্রাচীর দিয়ে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিদিতর আহম্মদীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা কতটা অরক্ষিত অবস্থায় আছে, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে তা জানা গেল। ৫২ বছরের পুরোনো এই স্কুলে আশপাশের এলাকার প্রায় ২০০ শিশু লেখাপড়া করতে আসে। টিফিনের সময়টুকুতে ওরা খেলায় মাতে। সমস্যা হলো, তুলসীরহাট-সয়ড়াবাড়ি সড়কঘেঁষা স্কুলটিতে কোনো প্রাচীর নেই। এই সড়ক দিয়ে অগুনতি হালকা ও ভারী যান চলে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, শিশুরা স্কুল মাঠে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলে। অনেক সময় বল স্কুল মাঠ পেরিয়ে সড়কে চলে যায়। ওরা প্রায়ই কোনো কিছু না বুঝেই বল ধরতে ছোটে। শিশুরা ভীষণ ঝুঁকিতে আছে। শিক্ষকেরা শিশুদের নিরাপদে যাতায়াত নিশ্চিত করতে স্কুল ভবনের পেছন দিয়ে একটি বিকল্প সড়ক নির্মাণের প্রয়োজনের কথাও বলেছেন।

এর মধ্যে দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকটি শিশু আহতও হয়েছে। বলেছে, তারা খেলতে গেলে ভয় পায়। এ বছর জাতীয় শিশু দিবসে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ ও কল্যাণে আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রিয় মাতৃভূমিকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাঁর এ আহ্বান ব্যক্তি বা বেসরকারি পর্যায়ের লোকজন দূরে থাক, সরকারি সংস্থাগুলোর কানে পৌঁছেছিল কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে। না হলে স্কুলের শিশুরা এমন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকবে কেন? প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর—কেউই শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমি নিশ্চিতের চেষ্টা করেনি। 

এলাকার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি, ধনবান মানুষ, তাঁরাও চাইলে একটা প্রাচীর নির্মাণ করে দিতে পারতেন। এক বাবা তো ক্ষোভের সঙ্গে বলেই ফেলেছেন, ‘রাস্তার পাশে স্কুলটার একটা সীমানাপ্রাচীর দিতে সরকারের কত টাকা লাগে? রাস্তায় শিশুরা মারা যাওয়ার পরে কি প্রাচীর দেওয়া হবে?’ দেশজুড়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিযোগিতা দেখি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে অবকাঠামোর উদ্বোধন হচ্ছে একের পর এক। দেখেশুনে ছেলেবেলায় পড়া অস্কার ওয়াইল্ডের ‘দ্য সেলফিশ জায়ান্ট’ গল্পের কথা মনে হলো। বাগানে শিশুদের আনাগোনায় বিরক্ত হয়েছিল বাগানমালিক দৈত্য। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল ওদের। এর পর থেকে বাগানে ফুল ফোটা বন্ধ হয়ে গেল, শোনা গেল না পাখির গান। অবকাঠামো যদি শিশুকেই সুরক্ষা দিতে না পারল, তাহলে তা কি স্বস্তিকর হতে পারে? 

আমরা আশা করব, সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে থাকবে শিশুরা। অন্তত শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।