ব্রতীর কর্মপরিসর প্রসারিত হোক

সম্পাদকীয়

দেশের বহু স্থানে ভূগর্ভস্থ পানি আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাবে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। ইউনিসেফসহ একাধিক আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংস্থা গবেষণা করে দেখেছে, এসব এলাকায় গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে তোলা পানি পানে স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়েছে। 

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চামাগ্রাম, লাহারপুর ও লক্ষ্মীপুর—পাশাপাশি তিনটি গ্রাম উল্লেখিত শ্রেণিভুক্ত। তিন দশক আগে এই তিন গ্রামে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক শনাক্ত হয়। প্রথম দিকে সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা ‘বিষাক্ত’ পানির বিকল্প হিসেবে পরিশুদ্ধ পানি সরবরাহের উপায় নিয়ে স্থানীয় মানুষের সামনে হাজির হয়নি। 

পরে বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে আসে ‘ব্রতী’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। দীর্ঘদিন গবেষণার পর তারা নদীর উপরিভাগের পানি বিশুদ্ধকরণের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। তারা এক যুগের বেশি সময় ধরে মহানন্দা নদীর পানি বিশুদ্ধ করে ওই তিন গ্রামে সরবরাহ করছে। বর্তমানে তারা আর্সেনিকপ্রবণ ওই এলাকার বাড়ি বাড়ি নিরাপদ পানি দিচ্ছে। পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতিটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘জলকন্যা’। এর কাজ মিষ্টি পানি খুঁজে বের করা এবং আর্সেনিকপ্রবণ এলাকার তৃষ্ণার্ত মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সহজলভ্য করা। ৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তিনটি গ্রামের ৬০০ বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। একেকটি বাড়িতে সাড়ে ১৬ হাজার থেকে ২৫ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এর জন্য সুবিধাভোগী পরিবারগুলোর কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে ফি নিচ্ছে সংস্থাটি। তবে বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ায় প্রকল্পটি লাভজনক হতে পারছে না। 

ব্রতীর এই কার্যক্রম দ্রুত সম্প্রসারণ করা দরকার। এ ছাড়া ব্রতীর অনুকরণে আরও সংস্থাকে এগিয়ে আসা দরকার। যেসব এলাকাকে আর্সেনিককবলিত হিসেবে ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে, সেসব এলাকায় পুকুর বা নদীর উপরিস্থ পানি শোধন করে সরবরাহের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। না হলে দীর্ঘ মেয়াদে যে ক্ষতি হবে, তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে বেড়াতে হবে। 

উন্নত বিশ্বে সুপেয় হিসেবে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করা হয়। এ জন্য তারা নদীকে সুস্থ ও সুন্দর রাখে। কিন্তু বাংলাদেশ নদীমাতৃক হলেও ভূগর্ভস্থ পানি বেশি ব্যবহৃত হয়। এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে ব্রতী একটি পথ দেখিয়েছে। তাদের সেই দেখানো পথে হাঁটতে হবে। আগামী প্রজন্মের ভালো থাকা অনেকটাই এর ওপর নির্ভর করছে।