প্রভাবশালীদের থামাতেই হবে

সম্পাদকীয়

পাথরঘাটা উপকূলীয় অঞ্চলের বলেশ্বর, বিষখালী নদী ও সাগরমোহনায় নিষিদ্ধ গোপজালের ব্যবহার এবং ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের ঘটনা পরিবেশ ও সম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে। অসাধু জেলেরা জলজ প্রাণী শিকার ও বাণিজ্যের জন্য শ্বাসমূলীয় গাছ নির্বিচার কেটে নিচ্ছে। এটি একদিকে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করছে, অন্যদিকে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

এ অঞ্চলের নদী ও মোহনাগুলোয় পাতা গোপজালগুলো এতটাই মারাত্মক যে এগুলোয় পোনা মাছ তো ধরা পড়ছেই, সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে প্রায় সব ধরনের জলজ প্রাণী। একেকটি গোপজাল এক থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ হয়, যা স্থাপন করতে গেওয়া ও কেওড়াগাছের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির শ্বাসমূলীয় গাছ কেটে হাজার হাজার খুঁটি ব্যবহার করা হয়। এ গাছগুলো কেটে নেওয়ার ফলে পরিবেশের ওপর এক স্থায়ী ক্ষতির ছাপ পড়ে। পাশাপাশি এসব গাছ উপকূলীয় এলাকা ও জনগণকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করত।

দুঃখজনকভাবে এসব অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী মহল। অভিযোগ আছে, বন ও মৎস্য দপ্তরের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে গোপজাল পাতার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধ কার্যক্রমকে বৈধতার রূপ দেওয়া হচ্ছে।

একেকটি গোপজাল প্রতিদিন বিশাল পরিমাণ মাছ আহরণ করে, যা স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাও এক গভীর প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বন কেবল প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য আবাসস্থল নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার অন্যতম ঢাল। এই বনগুলো ধ্বংস হওয়া মানে সামগ্রিক পরিবেশব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। পাশাপাশি এসব অঞ্চলে নিষিদ্ধ জালের কারণে মাছের অভাব ঘটলে এর প্রভাব শুধু উপকূলীয় অর্থনীতির ওপর নয়, দেশের সামগ্রিক খাদ্যনিরাপত্তার ওপরও পড়বে।

গোপজাল ব্যবহার ও ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের বিপদ এতটাই গুরুতর যে এটি এখনই রোধ না করা গেলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং তাদের জন্য বিকল্প জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ সংকট সমাধান অসম্ভব।

মানবসৃষ্ট এই পরিবেশ বিপর্যয় থামানোর এখনই সময়। পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। আর এই দায়িত্ব পালনে অবহেলা জাতির ভবিষ্যতের জন্য চরম বিপদ ডেকে আনবে।