সব ক্রসিংয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়

দেশের রেলপথগুলোতে দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ অবৈধ ক্রসিং। রেলপথের ওপর দিয়ে বা কাছাকাছি জায়গায় সড়ক নির্মাণের কারণে অবৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যাও বাড়ছে।

অনেক সময় রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই এসব সড়ক নির্মাণ করা হয়। সেখানে যে ক্রসিংগুলো তৈরি হচ্ছে, রেল কর্তৃপক্ষের কাছে সেসব অবৈধ। ফলে সেসব ক্রসিংয়ে নিরাপত্তার কোনো বালাই থাকে না। দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রাম-দোহাজারী পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার রেলপথে অবৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৪৭। ফলে রেলপথটিতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

প্রায় শত বছর ধরে দোহাজারী স্টেশনই ছিল দেশের সর্বদক্ষিণে সর্বশেষ স্টেশন। এখন সেই স্টেশন দিয়ে ট্রেন চলে যায় কক্সবাজার পর্যন্ত। মানে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথটি আরও সম্প্রসারিত হয়ে এখন শেষ হয়েছে কক্সবাজারে গিয়ে। দেশের নতুন এ রেলসেবা নিয়ে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে বেশ আগ্রহও তৈরি হয়েছে। এখন এই রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ অংশে এতগুলো অবৈধ ক্রসিং অবশ্য ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথের বেশি এলাকায় রেলপথের ওপর দিয়ে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু স্থানে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নির্মাণ করা কাঁচা রাস্তাও রয়েছে। এসব অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান ও প্রতিবন্ধকই নেই।

ফলে ট্রেনের হুইসেল শোনা গেলেও সেই সড়কের ওপর দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ নানা ধরনের যানবাহন। ট্রেন যখন সড়কের একেবারে কাছাকাছি, তখন রেলপথ থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুড়াহুড়ি শুরু হয় যানবাহনের চালকদের মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথে বৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে ২৫টি। এসব লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধক ও গেটম্যান রয়েছেন। কিন্তু এতগুলো অবৈধ ক্রসিংয়ের ক্ষেত্রে তাহলে কী হবে? আবার সেখানকার সব সড়কই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। কারণ, সেসব সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে।

রেল পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথের বৈধ সব লেভেল ক্রসিংয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু সড়ক বন্ধ করা হলেও চালকেরা ইস্পাতের পাত তুলে নিয়ে যানবাহন চালাচ্ছেন। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপাতত অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ ও প্রতিবন্ধকতা স্থাপনের পরিকল্পনা নেই।

কথা হচ্ছে, অবৈধ ক্রসিংগুলো কি বন্ধ করা সম্ভব হবে? স্থানীয় লোকজন যে তা মানছেন না, সেটি রেল কর্মকর্তার বক্তব্যেই স্পষ্ট। তা ছাড়া সড়কগুলোর কারণেও অনেক অবৈধ ক্রসিং বন্ধ করা সম্ভব হবে না। ফলে সেগুলোকে বৈধ ক্রসিংয়ে চিহ্নিত করে সেখানে পর্যায়ক্রমে গেটম্যান নিয়োগ ও প্রতিবন্ধক বসানো উচিত। আশা করি, রেল বিভাগ বিষয়টি তাদের সুবিবেচনার মধ্যে রাখবে।