দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়

দেশের নৌ দুর্ঘটনার অন্যতম কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে ঝালকাঠির ট্র্যাজেডি। ২০২১ সালে বছরের শেষের দিকে এক লঞ্চ দুর্ঘটনায় আগুন লেগে ৪৭ জন যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছিল। অথচ সে সময় যদি জেলাটিতে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন থাকত, তাহলে এত মানুষের প্রাণহানি ঘটত না। ঘটনার পর সেখানে একটি নৌ ফায়ার স্টেশনের দাবি উঠছিল কিন্তু ঘটনার এক বছর পরও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর ঘটনায় মাঝনদীতে দাউ দাউ করে জ্বলছিল লঞ্চটি। কোথাও ভেড়ানোও যায়নি। লঞ্চটিতে অগ্নি প্রতিরোধের ব্যবস্থা ছিল না, নির্বাপণেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। স্থানীয় অনেক মানুষ এগিয়ে এলেও লঞ্চ পর্যন্ত যেতে পারছিলেন না। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে অনেক যাত্রীকে উদ্ধারও করেছিলেন।

সুগন্ধা নদীর ঘটনায় লঞ্চের আগুন নেভাতে ও উদ্ধারকাজের জন্য বরিশালের নৌ ফায়ার স্টেশন ইউনিট ও ডুবুরি দলকে আসতে হয়েছিল। ট্রলারযোগে আসতে গিয়ে তাদের অনেক সময় পেরিয়ে যায়। সে সময় ঝালকাঠিতে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন থাকলে দ্রুত পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব ছিল।

সুগন্ধা, বিষখালী, বাসন্ডা ও গাবখান—চার নদীর মোহনায় উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির অবস্থান। দক্ষিণাঞ্চলে নৌ যোগাযোগে এ জেলার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। নৌপথটিতে বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী অসংখ্য জাহাজ চলাচল করে। এখানকার গাবখান চ্যানেল দিয়ে খুলনা, মোংলা, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কলকাতায় চলাচল করে অনেক নৌযান। এ ছাড়া বরগুনা, পাথরঘাটা, বরিশাল ও ঢাকার নৌযান চলাচল করে। ফলে সেখানে জেলাটিতে একটি নৌ ফায়ার স্টেশনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

নৌ ফায়ার স্টেশন থাকলে সেদিন ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি আরও কম হতো বলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ নিজেরাই স্বীকার করেছে। এরপরও কেন সেখানে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন হবে না, সেটাই আমাদের প্রশ্ন। প্রায় ৬০ বছর আগে ঝালকাঠিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশন। সেটিকে ছয় বছর আগে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তা-ও এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে সেদিনের দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন জানাচ্ছে, লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নৌ ফায়ার স্টেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বক্তব্য, ঝালকাঠিতে নৌ ফায়ার স্টেশনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমোদিত হলে নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে।

আমরা আশা করব, ঝালকাঠিতে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন বাস্তবায়ন করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এত বড় দুর্ঘটনার পর এ ব্যাপারে কালক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই।