গ্রাহকেরা কেন খেসারত দেবেন

সম্পাদকীয়

ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার অনেক মিল। প্রথমত, সরকার এই দুই সংস্থার জন্য যোগ্য তৃতীয় কোনো লোককে খুঁজে পায়নি। ফলে ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে একই ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। চট্টগ্রাম ওয়াসায় এমডি পদে আরেক ব্যক্তি আছেন ২০১১ সাল থেকে। এই দুই প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকসেবার মান যত কমছে, এমডিদ্বয়ের বেতন–ভাতা ও সুযোগ–সুবিধা তত বেড়ে চলেছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাঁচ বছরে তিন দফায় ৯০ হাজার পানির মিটার কিনেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ চালানটি কেনা হয় দুই বছর আগে। গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ ও মিটার বসানোর পর এখন ওয়াসা বলছে, এসব মিটারে কারসাজির সুযোগ আছে, ভুল বিল হয়। তাই বাদ দিতে হবে। নতুন ৯০ হাজার মিটার কিনতে ২০০ কোটি টাকায় আবার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

ওয়াসার প্রকৌশলীরা বলছেন, আগে কেনা মিটারগুলো মেকানিক্যাল (ওয়াসার কর্মীদের সশরীর গিয়ে বিল রিডিং করতে হয়)। নতুন করে কেনা হবে ডিজিটাল মিটার। ২৭ কোটি টাকা খরচের পর পাঁচ বছর না যেতেই মিটার বদলানোকে অপচয় হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ওয়াসার ভুল পরিকল্পনার খেসারত এই অর্থ। 

বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি এবং বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। আগের মিটার পরিবর্তনের জন্য প্রত্যেক গ্রাহককে প্রায় চার হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এখন ডিজিটাল মিটার বসালে খরচ গ্রাহককেই মেটাতে হবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিজিটাল মিটার বসানো হলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলের রিডিং নিতে হবে না। সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় বিল হবে। অথচ মেকানিক্যাল মিটার কেনার সময়ও বলা হয়েছে, ‘ভালো’ মানের মিটার কেনা হচ্ছে। সঠিক বিল পাওয়া যাবে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকের ঘাড়ে দ্বিতীয় দফায় বাড়তি টাকার বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে ওয়াসা। ওয়াসার পাঁচ গ্রাহক ও বোর্ডের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পরিকল্পনা না করেই কখনো মেকানিক্যাল মিটার, আবার কখনো ডিজিটাল মিটার কেনা হচ্ছে। নতুন করে আরও ৯০ হাজার মিটার কেনার পরিকল্পনা চলছে। অথচ আগের তিন হাজার ডিজিটাল মিটার এখনো বসানো হয়নি। পানির মিটার আনার দুই বছর পর তাদের মনে হলো এটি ত্রুটিপূর্ণ এবং বিল নয়ছয় করা যায়। বিষয়টি ওয়াসার কর্তাব্যক্তিরা আগে ভাবলেন না কেন?

‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’ বলে একটি প্রবাদ চালু আছে। সেটি সরকারি ব্যয়ের বিষয়ে। কিন্তু পানির বিলের মিটারের দাম আগের মতো গ্রাহকদের কাছ থেকেই নেওয়া হবে। মিটারের দাম দিতে গ্রাহকদের আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁরা দুবার কেন পকেট থেকে টাকা দেবেন?

ত্রুটিমুক্ত মিটার দেওয়ার চিন্তাটি কর্তৃপক্ষের মাথায় আগে এল না কেন? সেখানে দক্ষ প্রকৌশলীরা আছেন, অতি দক্ষ ও অভিজ্ঞ এমডি আছেন, তাঁরা কী করেছিলেন? আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, নতুন মিটারের যে দাম নির্ধারণ করা হবে, সে দাম থেকে দুই হাজার টাকা বাদ দিতে হবে। চট্টগ্রাম ওয়াসার ভুলের খেসারত গ্রাহকেরা দেবেন না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, যাঁদের ভুলে ত্রুটিপূর্ণ মিটার আনা হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেককে জবাবদিহির আওতায় আনা হোক।