একাত্তরের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করুন

সম্পাদকীয়

মহান বিজয় দিবস আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব। কিন্তু এই অহংকার ও গর্বের পেছনে অনেক ত্যাগ রয়েছে। একসাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি এই বিজয়। বাংলার দামাল ছেলেরা বিজয় ছিনিয়ে আনার আগপর্যন্ত হানাদার বাহিনী দেশজুড়ে হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে গিয়েছিল।

এসবের নানা ক্ষতচিহ্ন এখনো দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে আছে। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্রগুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এসব নির্যাতনকেন্দ্রের অনেকগুলোই সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে। অনেকগুলো এখনো পড়ে আছে অবহেলা-অযত্নে।

একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি নির্যাতনকেন্দ্র ছিল মৌলভীবাজার প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই)। সেখানকার বাংকারে অনেক মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় ৩০ ফুট বাই ২৫ ফুটের এই বাংকার ছিল নির্যাতনের একটি কেন্দ্র। পিটিআইয়ের পাশে রেস্টহাউস ভবনেও লোকজনকে আটকে রেখে চালানো হতো নির্যাতন। কিন্তু সেই বাংকারকে এখনো পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বাংকারটি সাক্ষ্য দেয়, এ দেশের মানুষের ওপর কী পরিমাণ নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়েছে। কিন্তু সেই বাংকারটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই। এর তিন দিকে ভবন উঠে গেছে। ধীরে ধীরে বাংকারটি দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে।

তবে এখনো বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উদ্যোগে এখানে শিক্ষার্থীদের আনা হয়। কিন্তু বাংকারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি গৌরবময় লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্ন সরাসরি দেখার সুযোগ হারাবে নতুন প্রজন্ম।

বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। কিন্তু বাইরে থেকে দেখলে এখানে যে একটি বাংকার আছে, তা বোঝা যায় না। রেস্টহাউসের স্থানে কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে জানতে এই স্থানগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে সংরক্ষণ করা দরকার। এখানে বাংকারের নামফলক, গেট থাকলে অনেকে চিনতে পারত, ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ হতো।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমানের বক্তব্য, ‘আমরা বাংকারটি সংরক্ষণের জন্য এখনো নকশা করতে পারিনি। গণপূর্ত বিভাগকে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি। এখন চেষ্টা করছি বেসরকারি ফার্মকে দিয়ে নকশা করানোর। সিলেটের একটি ফার্মের সঙ্গে কথা হয়েছে।

তারা কিছুদিনের মধ্যে এসে স্থান দেখবে। তারপর নকশা করে দিলে এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’ আমরা পৌর মেয়রের বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে চাই। আশা করি, বাংকারটি সংরক্ষণে তাঁর এই উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।