খুচরা বাজারে শৃঙ্খলা আনুন 

অর্থনীতি বেহাল হলে তার ধাক্কা সবার আগে পড়ে বাজারে। সেটিই আমরা দেখে আসছি কয়েক বছর ধরে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির নাভিশ্বাস ওঠা নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার বারবার সমালোচিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সে সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন দায়িত্ব নিয়েছে। নতুন সরকারের কাছেও মানুষের প্রত্যাশা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হোক। যথাযথ বাজার ব্যবস্থাপনা করলে সেটি কিছুটা হলেও সম্ভব। আমরা মনে করি, নতুন সরকারের এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া উচিত।

আন্দোলন ও আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় বাজার ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছিল। বাজারে পণ্যের সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত এক সপ্তাহে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও আছদগঞ্জের সব মোকাম খুলেছে। বাজারে মিনিট্রাক, ভ্যান ও পণ্যবাহী যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বড় পাইকারি বাজারটিতে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম। আবার বাজারে চাহিদা অনুযায়ীও সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু পণ্যের দাম কমার প্রভাব পড়ছে না খুচরা বাজারে। 

চট্টগ্রামের নগরে সবজির বড় পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারেও গত তিন দিনে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আড়তদারেরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি। যেহেতু সবজি পচনশীল পণ্য, তাই মজুত করে রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু এর প্রভাব খুব একটা পড়ছে না খুচরা বাজারে। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, নগরে হাজার হাজার খুচরা বিক্রেতা। অধিকাংশ বিক্রেতা রসিদ সংরক্ষণ করেন না। এখানে দামের যে তারতম্য হচ্ছে, তার সমাধানে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করেও কাজ হচ্ছে না। এর জন্য ব্যবসায়ী পর্যায়েও সচেতনতা দরকার। তবে আমরা মনে করি, অধিদপ্তরসহ জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রতিটি বাজারে ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের সমিতি আছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও আলোচনার দরকার আছে।

পণ্য সরবরাহে সড়কে ও বাজারে নানা ধরনের চাঁদাবাজি বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের ওপরেও বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেক জায়গায় চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় চাঁদাবাজিতেও চলছে পালাবদল, আসছে নতুন দল। আবার চাঁদাবাজি বন্ধে নতুন সরকারের আছে কঠোর নির্দেশনা। আমরা মনে করি, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সচেতন ছাত্র-জনতা মিলে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বাজারে এর একটি বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। কিন্তু সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে পাইকারি ও খুচরা বাজার ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ে। বড় সিন্ডিকেটগুলো ভেঙে না দিলে তা কখনো সম্ভব নয়।