দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কলিত ব্যয় আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত হতে পারে। ২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুতে এই নির্বাচন হওয়ার কথা।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে গত বুধবার ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। এতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তাদের দুই দিনের সম্মানী ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আগে তাঁদের এক দিনের ভাতা দেওয়া হতো। পাশাপাশি জ্বালানি খরচও বাড়বে। নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন ৯ লাখের বেশি সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা। নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভাতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভাতা মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এর বাইরে নির্বাচনী প্রশিক্ষণে খরচ হবে ১০০ কোটি টাকার বেশি।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৭০০ কোটি টাকা। সে ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি আগামী নির্বাচনে ব্যয় হচ্ছে। ইসি দুই দিনের যে আপ্যায়ন খরচ ধরেছে, সেটা উদ্বেগের বিষয় নয়। উদ্বেগের বিষয় হলো, ‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’ জনগণ যে দেড় হাজার কোটি টাকা জোগান দেবেন, তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কি না। নির্বাচনের সময় সেই পরিবেশ থাকবে কি না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণের গরিষ্ঠসংখ্যক ভোট দিতে পারেননি। এবার পারবেন, সেই নিশ্চয়তা ইসি এখনো দিতে পারেনি। তাহলে দেশের জনগণ কেন এ রকম একটি নির্বাচনের পেছনে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করবেন?’
নির্বাচনের জন্য প্রতিযোগী সব দলের জন্য যে মাঠ সমতল করা ইসির দায়িত্ব, সেটি তারা কতটা পালন করেছে? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীন নির্বাচন করার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীন তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। কেবল বিএনপি নয়, বাম ও ইসলামি দলগুলোর বড় অংশ জানিয়ে দিয়েছে, নির্দলীয় সরকার ছাড়া তারাও নির্বাচনে যাবে না
তাহলে কি বাংলাদেশে আরেকটি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে? ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে ভোট হয়নি, প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব দল এলেও কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি।
যদি এবার বিরোধী দল নির্বাচনে না আসে, ২০১৪–এর পুনরাবৃত্তি ঘটা অসম্ভব নয়। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হতে না পারা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিরোধী দলে থাকতে যাকে তাঁরা অপরিহার্য ভাবেন, ক্ষমতায় গিয়ে সেটাই পরিত্যাজ্য ঘোষণা করেন দলীয় সুবিধার জন্য। এই স্ববিরোধিতা থেকে তাঁদের বেরিয়ে আসতে হবে।
নির্বাচনকালীন সরকার রাজনৈতিক বিষয় বলে ইসি যে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে, সেটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা অন্তত রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসার বিষয়ে চাপ দিতে পারে। একটি একতরফা ও নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের জন্য কেন জনগণ দেড় হাজার কোটি টাকা দেবেন?