চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করছে

শাটল ট্রেনের ছাদে করে যাওয়ার সময় হেলে পড়া একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে হাটহাজারী উপজেলার চৌধুরীহাট স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঝড়বৃষ্টির কারণে গাছ রেললাইনের ওপর হেলে পড়ে ছিল। নগরের বটতলী স্টেশন থেকে ক্যাম্পাসে ছেড়ে আসা ট্রেনটিতে অন্য সময়ের তুলনায় ভিড় বেশি হয়েছিল। নগরে টিউশনি ও খণ্ডকালীন চাকরি করা শিক্ষার্থীরা এই ট্রেনে ক্যাম্পাসে ফেরেন। ভিড়ের কারণে ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেকেই শাটল ট্রেনের ছাদে ওঠেন।

এই ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক ক্লাব ছাড়াও বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ ৬৫টি যানবাহন ভাঙচুর করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির প্ররোচনা ছিল। অন্যদিকে পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছে, ভাঙচুরের জন্য ছাত্রলীগের বিবদমান দুই গ্রুপ একে অপরকে দায়ী করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ভাঙচুর অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত। রাষ্ট্রীয় সম্পদের এমন ক্ষয়ক্ষতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমস্যার মূলে না গিয়ে যেভাবে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির প্ররোচনা আবিষ্কার করেছে, তা নিজেদের ব্যর্থতা এড়ানোর চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। 

১৫ জন সতীর্থ আহত হওয়া এবং তাঁদের একজনের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীদের কেন ট্রেনের ছাদে উঠে চলাচল করতে হয়? ট্রেনে বগির সংখ্যা নেহাতই কম শিক্ষার্থীদের তুলনায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কি উচিত ছিল না ট্রেনের সংখ্যা বা বগির সংখ্যা বাড়ানোর? কেন তারা সেই কাজটি করতে পারেনি? রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে বলে যাওয়া বা চিঠি পাঠানোই কি যথেষ্ট?

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় ট্রেনে বগি বৃদ্ধি ও সূচি বাড়ানোর দাবি জানালেও প্রশাসন আমলে নেয়নি। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে ছাদে যাতায়াত করতে হয়। এ ক্ষেত্রে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষেরও দায় আছে। বিপুল ব্যয়ে রেলস্টেশন সংস্কার করা হয়েছে হলেও ট্রেন বা বগির সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। অথচ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন চালুর সময় যে সংখ্যক শিক্ষার্থী ছিল, বর্তমানে তা অনেক বেড়েছে। কিন্তু। মাঝখানে একটি ডেমু ট্রেন দেওয়া হয়েছিল, তা-ও অকেজো হয়ে পড়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে।  

শাটল ট্রেনে ছিনতাই, পাথর নিক্ষেপ, যৌন হেনস্তার ঘটনাও নতুন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শহর থেকে যাতায়াতে শিক্ষকদের জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসের ব্যবস্থা করতে পারে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় যাতায়াতের বিষয়টি কেন ভাবে না। শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে নোংরা, পুরোনো ও অনিরাপদ ট্রেনে দাঁড়িয়ে কিংবা ছাদে বসে যাবেন, এটা কি তাঁদের প্রতি অমানবিক আচরণ নয়? 

সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক–কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দুর্নীতি, অবাধে গাছ কাটা ও পরিবেশ ধ্বংসের জন্য উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দিকে বারবার আঙুল উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে শাটল ট্রেনে এ দুর্ঘটনা ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁরা উপাচার্যের বিলাসবহুল আবাসিক ভবন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। সেটিই যদি হয়ে থাকে, শিক্ষার্থীদের মানসম্মত আবাসন ও পরিবহন সুবিধা কেন নিশ্চিত করা যাবে না। কর্তৃপক্ষকে সবার আগে শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করে কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। আশা করি, প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার দায়দায়িত্ব নেওয়ায় প্রশাসনকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে শাটল ট্রেনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বগির ব্যবস্থা করা হোক। আমরা চাই না, ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক।