জামালপুরের খালটি পুনরুদ্ধার করুন

সম্পাদকীয়

বড় শহরগুলোর জলাবদ্ধতা সমস্যা এখন পৌঁছে গেছে ছোট শহরগুলোয়ও। কারণ মূলত একটিই, শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খালগুলোর দখল-দূষণ। খালদূষণের পেছনে আছে বর্জ্য অব্যবস্থাপনা। দেশের কোনো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এখন পর্যন্ত টেকসইভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না। দিন শেষে পরিবেশের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। নদী-খালগুলো হুমকির মুখে পড়ছে। বেড়ে যাচ্ছে নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকিও। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি জামালপুর শহরে। সেখানে বংশ খালটি এখন শহরের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

২০০ বছরের পুরোনো বংশ খাল ঘিরে গড়ে উঠেছিল জামালপুর শহর। এ খালটি হতে পারত শহরটির অলংকার। এখন এ খালের কারণে নগরবাসীকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। এর দায় পৌরসভা কর্তৃপক্ষের যেমন আছে, নগরবাসীরও কম নয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বর্তমানে খালটি শহরের ভাগাড়ে পরিণত হয়ে গেছে। পৌরবাসী ইচ্ছেমতো বংশ খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। বাসাবাড়ি ছাড়াও হোটেল, রেস্তোরাঁ, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সব বর্জ্যই ফেলা হয় এ খালে। ময়লা-আবর্জনার স্তূপের কারণে মশার প্রজননকেন্দ্র হয়ে উঠেছে খালটি। খালের কালো পানি পচে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। খালপাড়ের বাসিন্দাদের চলতে হয় নাক চেপে।

শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও পয়োনিষ্কাশনের জন্য একসময় বংশ খালটি ভূমিকা রেখেছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বংশ খাল অনেকটা দখলমুক্ত করা হয়। সে সময় খালের তলদেশে আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে পানিপ্রবাহের জন্য ড্রেনের মতো তৈরি করা হয়। তখন এর সুফল পেয়েছিল নগরবাসী। আর এখন সামান্য বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। পৌরবাসী বংশ খালের ময়লার স্তূপ অপসারণ করে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, সবার আগে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। অনেকবার চেষ্টা করেছেন, যাতে খালে কোনো ধরনের বর্জ্য না ফেলা হয়। কিন্তু কেউ কথা শোনে না।

কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে এটিও বলতে হবে গত ১০ বছরেও কেন খালটি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নাগরিকের ওপর দায় চাপিয়ে দিলেই তো হবে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ কী উদ্যোগ নিয়েছে, সেটিও দেখতে হবে। খালে বর্জ্য না ফেলার ব্যাপারে নাগরিককে সচেতন করার দায়িত্বও তাদের। স্থানীয় পরিবেশ সংগঠন ও তরুণ প্রজন্মকেও সেই কাজে যুক্ত করতে হবে।

একসময় পাট, পাটজাত পণ্যসহ নানা ব্যবসায়িক পণ্য নিয়ে পালতোলা নৌকা চলাচল করা বংশ খালের এমন করুণ অবস্থা খুবই দুঃখজনক। আগের সেই ঐতিহ্য না থাকলেও খালটির যতটুকু টিকে আছে, তা অন্তত যত্নসহকারে ধরে রাখা হোক। সেটি হবে পৌর শহর ও শহরবাসী সবার জন্য মঙ্গলজনক।